Header Ads

হেফাজতের আপত্তি: বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে ‘মৌলবাদ’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে মতবিনিময়


হেফাজতের আপত্তি: বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে ‘মৌলবাদ’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে মতবিনিময়


বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যে ‘মৌলবাদ’ শব্দের প্রয়োগ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির নেতারা এ বিষয়ে বিএনপির প্রতি সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে হেফাজতের পক্ষ থেকে মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। অন্য সদস্যরা হলেন: নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ এবং অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুনির হুসাইন কাসেমী।

বিএনপির পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতের নেতারা ‘মৌলবাদের উত্থান’–সম্পর্কিত বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বিএনপির মতো দল থেকে এমন শব্দ ব্যবহার কাম্য নয়। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয় যে, তাঁদের মন্তব্য মূলত জামায়াতে ইসলামীর দিকেই ইঙ্গিত ছিল। তবে হেফাজতের নেতারা বলেন, এই ধরনের শব্দের ব্যবহার শুধু জামায়াত নয়, বরং সব ইসলামপন্থী দল ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই নেতিবাচক বার্তা দেয়।

বৈঠকে আরও আলোচনায় উঠে আসে হেফাজতের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে পূর্বে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিষয়। হেফাজতের দাবি, এসব মামলাকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে দ্রুত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি, সংগঠনের দায়ের করা মামলাগুলোর কোনো অগ্রগতি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করা হয় এবং বিএনপির সহযোগিতা চাওয়া হয়।

হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান বৈঠক শেষে বলেন, “আমাদের লোকজনকে হত্যা করে আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলা এখনো চলমান। আমরা সেগুলোর প্রত্যাহার চাই। বিএনপির কাছে এসব বিষয়ে আমরা সাহায্য চেয়েছি।”

এছাড়া, বৈঠকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপির নেতারা নির্বাচন সামনে রেখে হেফাজতের সমর্থন চান। জবাবে হেফাজতের নেতারা সম্মতি জানালেও কিছু শর্ত তুলে ধরেন। তারা নির্বাচন আগে সংবিধানে ইসলামসম্মত সংস্কার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দাবি করেন।

হেফাজতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে অনুরোধ জানানো হয়, সংবিধান থেকে বহুত্ববাদ শব্দটি বাদ দিয়ে “আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” যুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করতে। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের দাবিতেও সোচ্চার হতে বলা হয়।

বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি তাঁদের অনেক দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে, যদিও রাজনৈতিক কৌশলের কারণে তারা প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখ খুলবে না।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁরা ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন চায় এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দ্রুত একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাবেন। হেফাজতও এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

এই বৈঠকটি মূলত ছিল দুই দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি নিরসন এবং পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগ তৈরির একটি প্রয়াস, যেখানে ইসলামী মূল্যবোধ, রাজনৈতিক সমর্থন ও আইনি বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণভাবে উঠে আসে।

No comments

Powered by Blogger.