চারুকলা থেকে বের হলো ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’
পহেলা বৈশাখের সকাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়েছে বর্ণিল ও উৎসবমুখর ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য—‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এই শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, টিএসসি, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা ধরে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে।
শোভাযাত্রায় ছিল ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, দেশি-বিদেশি অতিথি, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণ। আয়োজনে সাজানো হয়েছে সাতটি বড় মোটিফ, সাতটি মাঝারি মোটিফ এবং সাতটি ছোট মোটিফ।
তবে এই উৎসবকে ঘিরে ছিল একটি অপ্রীতিকর ঘটনা। গত শনিবার ভোররাতে চারুকলা অনুষদের ভেতরে শোভাযাত্রার জন্য তৈরি দুটি মোটিফে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে একটি ২০ ফুট উঁচু ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ পুরোপুরি পুড়ে যায়। পাশাপাশি থাকা ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’টি ছিল একটি বিশালাকৃতির নারীর মুখাবয়ব—দাঁতাল মুখ, খাড়া চারটি শিং, হাঁ করা বিশাল মুখ, লম্বা নাক ও আতঙ্কিত চোখের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছিল। অনেকে একে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি বলে মনে করেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কালো টি-শার্ট ও বাদামি প্যান্ট পরা এক যুবক চারুকলার দক্ষিণ গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর দ্রুতই সে এলাকা ত্যাগ করে।
ঘটনার পরেই চারুকলার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা নতুন করে মোটিফটি তৈরির কাজ শুরু করেন। সোলার (থার্মোকল) মাধ্যমে রাতেই তারা ফ্যাসিবাদের প্রতীক সেই মুখাকৃতির নতুন সংস্করণ তৈরি করেন। এছাড়াও শোভাযাত্রার অন্যান্য মোটিফ—তরমুজের ফালি, বাঘ, ইলিশ, শান্তির পায়রা ও পালকি—সবকিছু সময়মতো সম্পন্ন করা হয় রোববার রাতের মধ্যেই।
সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আনন্দ, রঙ আর সৃষ্টির মাধ্যমে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চারুকলার এই ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রার উচ্ছ্বাস।
No comments