Header Ads

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর ও সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য: ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া

 


ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর ও সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য: ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া


বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর ঘিরে ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে তার দেওয়া এক বক্তব্য, যেখানে তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যকে (সেভেন সিস্টার্স) নিয়ে মন্তব্য করেছেন, সেটি দেশটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

বিতর্কের সূত্রপাত

চীনের একটি উচ্চপর্যায়ের আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখার সময় ড. ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন এবং কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন যা ভারতের রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তার বক্তব্যের নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু এখনও পুরোপুরি প্রকাশিত না হলেও বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে, এটি ভারতীয় স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।

ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া

ড. ইউনূসের বক্তব্য প্রকাশের পরপরই ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, নীতিনির্ধারক এবং মিডিয়া এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। ভারতের বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক তার মন্তব্যকে "আক্রমণাত্মক" এবং "বিপজ্জনক" বলে উল্লেখ করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ "বিস্ময়""হতাশা" প্রকাশ করেছেন।

বিশেষ করে ভারতের জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো এ মন্তব্যকে ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো ঐতিহাসিকভাবে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এ বিষয়ে বাইরের কোনো পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল হতে পারে।

বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব

ড. ইউনূসের মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্পষ্টতই সংবেদনশীল পর্যায়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থাকলেও এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারত এখনও সরকারিভাবে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীরব পর্যবেক্ষণ করছে এবং ভবিষ্যতে এটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।

চীনের ভূমিকাও আলোচনায়

ড. ইউনূসের এই মন্তব্য চীনের মাটিতে দেওয়ার কারণে আরও বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ভারত ও চীন দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশ ও লাদাখ নিয়ে। তাই চীন সফরে গিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের কোনো অংশ নিয়ে মন্তব্য করা স্বাভাবিকভাবেই ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের বিশ্লেষকদের মতে, চীন অনেক সময় ভারতবিরোধী মনোভাব উসকে দিতে পারে, যা কৌশলগতভাবে ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশের অবস্থান কী?

এ বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশকে একটি সংবেদনশীল অবস্থানে ফেলে দিতে পারে, কারণ ভারত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কৌশলগত অংশীদার।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যদি ড. ইউনূসের মন্তব্যকে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বলে ব্যাখ্যা দেয়, তবে তা পরিস্থিতি সামলাতে সাহায্য করতে পারে। অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় এ নিয়ে নীরব থাকলে ভারতের মধ্যে সন্দেহ ও অসন্তোষ বাড়তে পারে।

No comments

Powered by Blogger.