Header Ads

আজ চৈত্র সংক্রান্তি – পুরোনো বছরকে বিদায়, নতুন বছরকে বরণ

 

আজ চৈত্র সংক্রান্তি – পুরোনো বছরকে বিদায়, নতুন বছরকে বরণ


আজ চৈত্র মাসের শেষ দিন, যা আমরা "চৈত্র সংক্রান্তি" নামে জানি। এই দিনটি বাংলা বছরের শেষ দিনও বটে। আগামীকাল শুরু হবে নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩২। তাই আজ শুধু বিদায়ের দিন নয়, বরং নতুন বছরের আগমনের বার্তাও নিয়ে এসেছে।

এই দিনটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজ থেকেই শুরু হয় তাদের বিজু বা বৈসাবি উৎসব। এই উৎসব চলে দুই দিন ধরে—চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত। এবার পার্বত্য তিন জেলায় এই উৎসব উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

চৈত্র সংক্রান্তির পেছনে রয়েছে একটি পুরনো কৃষিপ্রথা। অতীতে কৃষিজীবী সমাজ সূর্যের তেজ প্রশমন এবং কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির আশায় এই সময় বিভিন্ন আয়োজন করত। তখন থেকেই শুরু হয় চৈত্র সংক্রান্তির প্রচলন। সময়ের সাথে এই উৎসব রূপ নেয় এক চিরায়ত বাঙালি ঐতিহ্যে।

চৈত্র সংক্রান্তির দিন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় পুরোনোকে বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরকে বরণ করতে। অনেকে বলেন, এই চৈত্র সংক্রান্তির ধারাবাহিকতা থেকেই পহেলা বৈশাখে বড় আয়োজনের রীতি গড়ে উঠেছে। ফলে, চৈত্র সংক্রান্তিও হয়ে উঠেছে বাঙালির আরেক বড় উৎসব।

দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ

চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ ঘিরে থাকছে নানা রকমের অনুষ্ঠান। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি।

শনিবার (১২ এপ্রিল) দেশব্যাপী ১২টি অঞ্চলে আয়োজন করা হয়েছে সাধুমেলা। একই দিনে শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের অংশগ্রহণে পালিত হয়েছে ফাগুয়া উৎসব।

আজ ও আগামীকাল (১৩ ও ১৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে হচ্ছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান, আয়োজনে রয়েছে নবপ্রাণ আন্দোলন। আজ বিকাল ৩টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হচ্ছে ব্যান্ড শো—যেখানে অংশ নেবে বিভিন্ন আদিবাসী ব্যান্ড যেমন এফ মাইনর (গারো), ইনভোকেশন (চাকমা), ইমাং (ত্রিপুরা), চিম্বুক (মারমা), ইউনিটি (খাসিয়া), এছাড়াও থাকছে পরিচিত ব্যান্ড যেমন ওয়ারফেজ, লালন, ভাইকিংস, দলছুট ইত্যাদি।

পহেলা বৈশাখ – নতুন বছরের বরণ

পহেলা বৈশাখের সকালে (১৪ এপ্রিল) ছায়ানটের আয়োজনে ঢাকার রমনা বটমূলে শুরু হবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে। একইসাথে রবীন্দ্র সরোবরে সকাল ৬টায় শুরু হবে ‘সুরের ধারা’র আয়োজন, যেখানে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বর্ষবরণ করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল ৯টায়। এতে বাঙালি এবং পাহাড়ি-সমতলের মোট ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে চীনা প্রযুক্তি দলের ড্রোন শো, সঙ্গে থাকবে বৈশাখী ব্যান্ড শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সবার অংশগ্রহণে বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজন

সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানান, এবারই প্রথমবারের মতো বৈশাখের শোভাযাত্রায় প্রায় ২০০টির বেশি ব্যান্ড মিউজিশিয়ান অংশ নেবেন, যাদের মধ্যে থাকবে নানা জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা। তারা সম্মিলিতভাবে গাইবেন একটি গান, যা হবে বিশ্বশান্তির আহ্বান এবং বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ।

তিনি আরও বলেন, আগে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীদের এই উৎসবে সেভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হতো না। এবার তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে, কারণ এই উৎসব বাংলাদেশের, তাই সবার অংশগ্রহণ জরুরি।

পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর বৈসাবি উৎসব

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিজু, সাংগ্রাই ও বৈসু—এই তিনটি উৎসব মিলেই গঠিত হয় বৈসাবি উৎসব। চাকমাদের বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসব একত্রিত হয়ে একটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।

চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন পালিত হয় ফুল বিজু। এদিন চাকমা মেয়েরা পাহাড় থেকে ফুল সংগ্রহ করে। ফুল তিন ভাগে ভাগ করা হয়—এক ভাগ বুদ্ধদেবের পূজায়, এক ভাগ জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, আরেক ভাগ দিয়ে ঘর সাজানো হয়।

সংক্রান্তির দিনে মূল বিজু পালিত হয়। এদিন সকালে বুদ্ধদেবের মূর্তি স্নান করানো হয়। যুবক-যুবতীরা নদী বা পুকুর থেকে পানি এনে বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নান করায় ও তাদের আশীর্বাদ নেয়।

একটি বিশেষ আয়োজন হচ্ছে ‘পাজন’ রান্না। এটি হলো নানা ধরনের সবজির মিশ্রণে তৈরি একটি বিশেষ তরকারি। অতিথিদের পাজন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, বছরের শেষে এই খাবার খেলে নতুন বছরের সূচনা হয় শুভভাবে।

ঘুড়ি উৎসব ও মাদ্রাসায় নববর্ষ

চৈত্র সংক্রান্তিতে পুরান ঢাকায় পালিত হয় ঘুড়ি উৎসব। আকাশ ভরে যায় রঙিন ঘুড়িতে—একটি চিরচেনা বাঙালি ঐতিহ্য।

এছাড়া এবার দেশের সব মাদ্রাসায় দুই দিনব্যাপী বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। এতে বলা হয়েছে, নিজেদের ব্যবস্থাপনায় চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ উৎসব সাড়ম্বরে পালন করতে হবে।


No comments

Powered by Blogger.