এমন কিছু করা উচিত নয়, যা জাতিকে বিভক্ত করে: নুরুল হক

 

বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া দেখে আমরা শঙ্কিত। মনে হচ্ছে, দেশে আরেকটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে।

দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে যে ফ্যাসিবাদী শাসন আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা কোনো দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল না। তাদের শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থান, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং দেশের ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মহলে সুসংহত অবস্থান ছিল।

৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারালেও তাঁর সুবিধাভোগীরা এখনো প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় রয়েছে। আমরা লক্ষ করছি, একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে, বিশেষ করে ছাত্রনেতাদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামরিক বাহিনী ও সরকারের দূরত্ব তৈরি করা হচ্ছে।

সম্প্রতি ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট এবং সেনানিবাসে সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গটি যদি সত্য হয়, তাহলে বিষয়টি নিয়ে আরও আগেই শক্ত প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি অনাকাঙ্ক্ষিত। একইভাবে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করার প্রসঙ্গে সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে প্রকাশিত বক্তব্যও রাষ্ট্রীয় সংবেদনশীল বিষয়ে আরও সচেতন, দায়িত্বশীল ও সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

বর্তমান ছাত্রনেতাদের মনে রাখতে হবে, তাঁরা এখন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাঁদের প্রতিটি কথা ও পদক্ষেপের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। এই সময়ে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের এমন কোনো মন্তব্য বা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়, যা জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করবে বা জনগণকে বিভ্রান্ত করবে। এর ফলে দেশে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে।

আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ এগিয়ে নেওয়া হোক। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হোক। তবে, পতিত স্বৈরাচার, তার দোসর ও বিদেশি শক্তিগুলো যেকোনোভাবে এই গণতান্ত্রিক যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং বিভ্রান্তি এড়িয়ে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে হবে।