Header Ads

ঈদের আনন্দ: সামষ্টিক উৎসব নাকি ব্যক্তিক প্রদর্শন?

 

ঈদের আনন্দ: সামষ্টিক উৎসব নাকি ব্যক্তিক প্রদর্শন?



ঈদ মানে আনন্দ, কিন্তু এই আনন্দ কি সবার ঘরে পৌঁছায়? উত্তর খুবই স্পষ্ট—না, সবার ঘরে ঈদের আনন্দ সমানভাবে আসে না। অনেকের ঘরে উৎসবের হাসি ফুটলেও, কেউ কেউ ঈদকে বেদনাদায়ক সময় হিসেবে দেখে। অথচ, ঈদের মূল চেতনা সর্বজনীন আনন্দের, যা সব শ্রেণির মানুষের জন্য এক অভিন্ন অনুভূতি সৃষ্টি করতে চায়।

ঈদের আনন্দ ব্যক্তিকীকরণ

সমাজে ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিক আনন্দের মাত্রা বাড়ছে, যেখানে ঈদের মূল চেতনার চেয়ে ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের ঈদ উদযাপনে বৈষম্য দেখা যায়। যাদের হাতে প্রচুর নগদ অর্থ আছে, তারা ঈদকে বিলাসিতার প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলছে। এতে করে ঈদ শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, অর্থ-বিত্তের প্রদর্শনীর মাধ্যমে সামাজিক বিভাজনের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।

ঈদ ও সামাজিক বৈষম্য

ঈদ উৎসব সমাজের ন্যায্যতা ও সহমর্মিতার পরীক্ষার জায়গা। অনেকের জন্য ঈদ আনন্দের উৎস হলেও, আর্থিক দুর্বলতার কারণে অনেকে উৎসবের স্বাদ নিতে পারে না। অথচ ঈদের আসল শক্তি নিহিত রয়েছে একসঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই। বর্তমানে ঈদ কেবল আড়ম্বরপূর্ণ উৎসব হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, যেখানে মানবিক মূল্যবোধের জায়গাটি দুর্বল হয়ে পড়ছে।

অর্থ ও ক্ষমতার প্রদর্শনী

গত কয়েক দশকে দেশে নগদ অর্থকেন্দ্রিক শ্রেণির উত্থান ঘটেছে, যারা মূলত রাজনৈতিক সুবিধাভোগী। এই শ্রেণি ব্যবসা, ঠিকাদারি, এবং অন্য নানা উপায়ে অঢেল অর্থের মালিক হয়েছে। ঈদসহ নানা উৎসবে তারা দানশীলতার আড়ালে নিজেদের ক্ষমতা ও বিত্তের প্রকাশ ঘটায়। বিশাল ইফতার আয়োজন, ঈদ উপহার বিতরণ, আর্থিক সাহায্যের নামে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা এসবের অংশ।

বৈধ-অবৈধ সম্পদের পার্থক্য

বৈধ ও অবৈধ উপার্জনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বৈধ সম্পদ অর্জনের পেছনে সততা ও কঠোর পরিশ্রম থাকে, যেখানে অবৈধ অর্থ দ্রুত অর্জিত হয় এবং তা সামাজিক মূল্যবোধকে দুর্বল করে। অবৈধ উপায়ে ধনী হওয়া ব্যক্তিরা ঈদকে ক্ষমতা ও অর্থ প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে, যা উৎসবের মূল চেতনার বিপরীত।

ঈদগাহ ও রাজনীতির প্রভাব

গ্রাম কিংবা শহর, ঈদের নামাজ আদায়ের মূল স্থান ঈদগাহ। কিন্তু এখন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ঈদগাহগুলোর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর হাতে চলে যাচ্ছে। এমনকি ঈদের নামাজ পরিচালনার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা ধর্মীয় উৎসবের স্বতঃস্ফূর্ততাকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে, যা ঈদের সম্মিলনী চেতনার পরিপন্থী।

ঈদের সার্বজনীন চেতনা ফিরিয়ে আনা

ঈদ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উচ্ছ্বাস বা সামাজিক প্রতিযোগিতার বিষয় নয়, বরং এটি সহমর্মিতা, সংযম ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতীক। ঈদের আনন্দ শুধুমাত্র বিত্তবানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। একে কেবলমাত্র বাহ্যিক জাঁকজমকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, প্রকৃত মূল্যবোধের সঙ্গে উদযাপন করাই হবে ঈদের প্রকৃত সফলতা।

উপসংহার

ঈদ এমন একটি উৎসব, যা সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করে। কিন্তু অর্থনৈতিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ঈদের সার্বজনীন চেতনা অনেকাংশে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ঈদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল ভোগ-বিলাস বা অর্থের প্রদর্শনী নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। তাই আসুন, আমরা ঈদকে ব্যক্তি থেকে সমষ্টির মধ্যে ফিরিয়ে আনি, যেন এটি সত্যিকারের আনন্দের উৎসব হয়ে ওঠে সবার জন্য।

No comments

Powered by Blogger.