জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি)কে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিতে হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে অক্টোবরের মধ্যেই ইসিকে প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে:
ভোটার তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ
ইসির অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো স্বচ্ছ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা। প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। প্রয়োজনে এটি সংশোধনও করা যায়। ২০২৪ সালের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে, এবং চলতি বছরের হালনাগাদ কার্যক্রমও চলছে।
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ
আইন অনুযায়ী, কোনো আদমশুমারির পর বা প্রয়োজনবোধে ইসি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ এবং বিভিন্ন ধাপে সম্পন্ন হয়, যেমন খসড়া প্রকাশ, আপত্তি গ্রহণ, শুনানি ও চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ।
ভোটকেন্দ্র স্থাপন
সাধারণত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নির্বাচনের অন্তত ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন
জাতীয় নির্বাচনের আগে ইসি নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে দলগুলোর নিবন্ধন দেওয়া হয়। আবেদন যাচাই-বাছাই ও মাঠপর্যায়ে তথ্য যাচাই করা হয়।
নির্বাচনী সরঞ্জাম সংগ্রহ
ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহের একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া থাকে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, ভোটার তালিকা, বিভিন্ন সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, খাম, কলম, ছুরি, দেশলাই ইত্যাদি কেনার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। ব্যালট পেপার সাধারণত সরকারি ছাপাখানায় ছাপানো হয়।
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ
নির্বাচনের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়। সাধারণত জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হন। নিয়োগের পর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা
ভোটের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনী নিয়োজিত থাকে। সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়।
নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব ইসি, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ইসি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো মূলত ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ভোটার তালিকা তৈরি ও সীমানা পুনর্নির্ধারণে বেশি সময় লাগে, তবে অন্যান্য কাজগুলো তুলনামূলক দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব। নির্বাচনের সময় ইসির কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর মধ্যে একটি।
No comments