Header Ads

গণহত্যার বিভীষিকাময় কালরাত: ২৫ মার্চ

 

গণহত্যার বিভীষিকাময় কালরাত: ২৫ মার্চ


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, এক বিভীষিকাময় রাত, যা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় কালো অক্ষরে লেখা থাকবে। সেদিনের রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র ও নিরপরাধ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ। ট্যাংক, মর্টার, মেশিনগান ও রাইফেলের গর্জনে ঢাকার আকাশ ভারী হয়ে উঠেছিল, আর্তনাদে কেঁপে উঠেছিল বাতাস। এক রাতে এত নির্মম গণহত্যার নজির বিশ্বে বিরল। এই রাতটি জাতির ইতিহাসে ‘কালরাত’ হিসেবে চিহ্নিত। ২৫ মার্চকে সরকারিভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তানে শোষণ ও দমন নীতি

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কখনোই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকারের দাবি মেনে নেয়নি। স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের উপর নানা শোষণ-নিপীড়ন চালিয়ে আসছিল। প্রথম আঘাত হানা হয়েছিল মাতৃভাষার ওপর, যা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের জন্ম দেয়। সেই আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতার চেতনা আরও দৃঢ় হয়। কিন্তু বাঙালির এই জাগরণকে দমন করতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিত গণহত্যার পথে হাঁটে।

অপারেশন সার্চলাইট: গণহত্যার সূচনা

২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শুরু করে তাদের কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ঢাকার রাস্তায় ট্যাংক নেমে আসে, শুরু হয় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল প্রধান লক্ষ্যবস্তু। ঘুমন্ত ছাত্র-শিক্ষকদের হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নীলক্ষেত, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানায় ইপিআর সদর দপ্তরেও চালানো হয় ব্যাপক হামলা। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই হত্যাযজ্ঞ। এক রাতেই প্রায় অর্ধলাখ নিরপরাধ বাঙালিকে হত্যা করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার বাণী

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যা চালিয়েছিল। অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে তারা নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত মানুষের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা, রাজারবাগসহ সারা দেশে হাজারো নিরপরাধ মানুষ শহীদ হন। তাঁদের আত্মত্যাগের পথ ধরেই দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে—এই গণহত্যা দিবসে আমাদের এই হোক অঙ্গীকার।’

গণহত্যা দিবসের কর্মসূচি

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ সারা দেশে রাত ১০:৩০ থেকে ১০:৩১ পর্যন্ত (১ মিনিট) প্রতীকী ব্ল্যাকআউট পালন করা হবে (জরুরি স্থাপনা ব্যতীত)।

সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে ২৫ মার্চের গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।

বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ শহীদ মিনারে সন্ধ্যা ৬:৪৫ মিনিটে ‘ভুলি নাই ভুলি নাই মৃত্যু মিছিল: জেনোসাইড একাত্তর দায়বদ্ধতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম’ শীর্ষক আলোক প্রজ্বালন ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

বাংলা একাডেমি স্বাধীনতা ও গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বেলা ৩টায় একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে।

এই দিনটি আমাদের জন্য শুধু শোকের নয়, বরং আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গণহত্যার শিকার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই ইতিহাস জানাতে হবে, যেন তারা দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.