হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ: অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি বৈধতা নিশ্চিত
![]() |
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ |
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের কাছে উপদেষ্টামূলক মতামত চান। পরে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন।
এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী রিট করেন। শুনানি শেষে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। সম্প্রতি এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশিত হয়।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও আদেশ
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আইনগতভাবে বৈধ এবং জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত। আদালত উল্লেখ করে, রাষ্ট্রপতি এক অনন্য পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করেন এবং সেই মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেন।
পূর্ণাঙ্গ আদেশে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং এটি জনগণের সংগ্রামের একটি স্বীকৃত প্রতিফলন।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ দাবি করেছিলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন সংবিধানে উল্লেখ নেই, তাই এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা উচিত হয়নি। তবে, আদালত রিটটিকে বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক উল্লেখ করে তা খারিজ করে দেয়।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মতামত গ্রহণ
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রশ্নের সমাধান প্রয়োজন, তাহলে তিনি সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাইতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে রাষ্ট্রপতিকে তার মতামত দিতে পারে।
রিট আবেদনকারী দাবি করেছিলেন যে, সুপ্রিম কোর্টের রুল অনুসরণ না করে রেফারেন্স নেওয়া হয়েছে এবং যথাযথ শুনানি ছাড়াই মতামত প্রদান করা হয়েছে। তবে, রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে জানায় যে, অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে শেখ হাসিনা সরকার পতন হলে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করেন।
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ৮ আগস্ট মতামত দেয়, যেখানে বলা হয় যে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের অধিকার রাখেন এবং তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের নিয়োগ ও শপথ গ্রহণ করাতে পারেন।
হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট করা হয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া সাংবিধানিকভাবে বৈধ এবং জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে সমর্থিত। আদালত রিট আবেদনকে ভিত্তিহীন হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি বৈধতা নিশ্চিত করে।
No comments