Header Ads

আ.লীগ নেতার ভাই পাচ্ছেন কোটি টাকার বই ছাপার কাজ

               

আ.লীগ নেতার ভাই পাচ্ছেন কোটি টাকার বই ছাপার কাজ




শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধিকাংশ সেক্টরে পুরনো সরকারের সুবিধাভোগীদের সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বরং এই দপ্তর এখন পুরনো আওয়ামী সুবিধাভোগীদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

বিশেষ করে আলোচনায় উঠে এসেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ভাই রব্বানী জব্বার। ২০২১ সালে তিনি নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে ২০২৩ সালে তিনি মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি হন, যদিও অনিয়মের অভিযোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি তাকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করেছে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর রব্বানী জব্বারের প্রেস দুটি প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার কপি বই ছাপার কাজ পায়, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। এই কাজগুলো তিনি পেয়েছেন ‘আনন্দ’ ও ‘এপেক্স প্রিন্টার্স’-এর নামে। নিম্নমানের বই সরবরাহ করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো জরিমানা হয়নি।

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার প্রক্রিয়াতেও রব্বানী জব্বারের প্রেসগুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তার প্রেস দুটি ১৬টি লটে ৪৭ লাখ বই ছাপার সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। আরও ৪৫ লাখ বইয়ের কাজ পেতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিষয়টি তদন্ত করছে।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে সরকার বদলের পরও তিনি এনসিটিবি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করছেন? অভিযোগ আছে, সমঝোতার মাধ্যমে দরপত্র দাখিল করে একটি সিন্ডিকেট পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে সরকারের অতিরিক্ত ৩০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এনসিটিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী জানান, দরপত্র প্রক্রিয়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারে। এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক রিয়াদ চৌধুরী বলেন, সব শর্ত পূরণ করলে কাজ না দেওয়ার এখতিয়ার এনসিটিবির নেই।

রব্বানী জব্বারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এনসিটিবি এখনো পুরনো সরকারের লোকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তিনি আরও বলেন, যতদিন এই সুবিধাভোগীদের না সরানো হবে, ততদিন এমন ঘটনা চলতেই থাকবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, "৫ আগস্টের পরও এক খুনি সরকারের সাবেক মন্ত্রীর ভাইকে বই ছাপার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এনসিটিবির কর্মকর্তারাই দায়ী।"

এ বছর এনসিটিবি বেশ কিছু নতুন শর্ত আরোপ করেছে, যেমন—কাগজের মান বাড়ানো, সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরপেক্ষ পরিদর্শন এজেন্সি নিয়োগ। তবে প্রিন্টাররা এতে একজোট হয়ে বেশি দামে দরপত্র দিচ্ছে। এই সমঝোতা বৈঠকের নেতৃত্ব দেন রব্বানী জব্বার।

মুদ্রণ শিল্প সমিতিতে রব্বানী জব্বারের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তার রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাবের কারণে কেউ প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেননি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনিয়মের অভিযোগে বর্তমান কমিটি বাতিল করে নির্বাচন দিতে বললেও, সমিতির সব পক্ষই আগামী নির্বাচন ঘিরে তাকে পাশে পেতে চায়।

তোফায়েল খান দাবি করেন, রব্বানী জব্বার তার প্যানেলে ছিলেন না। তবে যাদের সমর্থনে জিতেছেন, তারা পরবর্তীতে রব্বানীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন।

No comments

Powered by Blogger.