মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রকাশে জোর দেওয়া হচ্ছে
মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সংরক্ষণ ও হালনাগাদকরণ, তাদের কল্যাণ সাধন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, বিজয় দিবসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
অপরদিকে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতেও এই মন্ত্রণালয় ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের এই কার্যক্রম ও আগামী ছয় মাসের কর্মপরিকল্পনা প্রধান উপদেষ্টার সামনে উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস পক্ষপাতহীনভাবে তুলে ধরার ওপর বিশেষ জোর দেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে মন্ত্রণালয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা ও অবকাঠামোয় মুক্তিযুদ্ধের বিভ্রান্তিকর ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব স্থাপনায় রণাঙ্গনের বিস্তৃত বর্ণনা বা মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ পরিচয় দেওয়া হয়নি; বরং একটি পরিবারের ছবি ও সরঞ্জাম দিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পে ২৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও তেমন কোনো গবেষণা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধাভোগী শ্রেণি হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত সম্পত্তি, সুযোগ-সুবিধা ও অর্থকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামোতে বসে আওয়ামী লীগ রাজনীতি চালিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় থাকা অরক্ষিত মূল্যবান সম্পত্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে থাকা সম্পত্তিগুলো কীভাবে সুফলবানভাবে ব্যবহৃত হবে এবং ট্রাস্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দ্রুত একজন পরামর্শক নিয়োগ ও একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম নির্ধারণ, তাদের অধীনে থাকা সম্পত্তিতে সম্ভাব্য এন্টারপ্রাইজ চালু এবং ট্রাস্টকে পুনরায় সক্রিয় করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সব প্রকল্পের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সঠিকভাবে উঠে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার পরামর্শও দেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াসহ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইসলামী এনজিওগুলোকে সামাজিক ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার আহ্বানও দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্বের সহায়তার জন্য ইসলামি এনজিওদের আরও বেশি সামাজিক ব্যবসায় অংশ নেওয়া প্রয়োজন।
গত রোববার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিভিন্ন মুসলিম দেশের এনজিও প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বে নারীদের স্বাস্থ্যসেবাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গরীব হলে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ায় সমস্যা হয়। সামাজিক ব্যবসা এই সহায়তার একটি কার্যকর উপায়।’
তিনি আরও জানান, সারা বিশ্বের তরুণদের সামাজিক ব্যবসায় যুক্ত করে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এনজিও নেতারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধ্যাপক ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার প্রচার তাদের নিজ নিজ দেশে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
বিদেশি প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন তুরস্ক থেকে ইসলামি বিশ্বের এনজিও ইউনিয়ন (ইউএনআইডব্লিউ) মহাসচিব আইয়ুপ আকবাল, টার্কিশ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মুহাম্মদ হুসেইন আক্তা, মালয়েশিয়া থেকে পারসাতুয়ান ওয়াদাহ পেন্সারদাসান উম্মাহ (ডব্লিউএডিএএইচ), ইউএনআইডব্লিউর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ফাওয়াজ বিন হাসবুল্লাহ, পাকিস্তান থেকে আলখিদমাত ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ইউএনআইডব্লিউর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুস শাকুর এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ইউএনআইডব্লিউর অডিটিং বোর্ড সদস্য ড. সালামুন বাসরি।
এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিআইআইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুব আহমেদ, এসএডব্লিউএবির চেয়ারম্যান ও ইউএনআইডব্লিউর হাই অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য এস এম রাশেদুজ্জামান, ইউএনআইডব্লিউর কাউন্সিল সদস্য ও কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলী আফজাল এবং বিআইআইটির মহাপরিচালক ও আইআইআইটির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. এম. আবদুল আজিজ উপস্থিত ছিলেন।
No comments