প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে রেকর্ড অর্জন, অর্থনীতিতে স্বস্তি
বিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন। আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বা ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এই অর্থবছরে মোট প্রবাসী আয় হয়েছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০–২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
শুধু প্রবাসী আয় নয়, রপ্তানিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। গত মে মাসেই রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা আগের বছরের মে মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসের মধ্যে ৭ মাসেই ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধির প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, সদ্য সমাপ্ত জুন মাসেই দেশে এসেছে প্রায় ২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই এসেছে ১১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার। আগের বছরের জুনে এসেছিল ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া বৈদেশিক ঋণ সহায়তা, বিশেষ করে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির অর্থ ছাড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষ দিনে (১ জুলাই) রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) বিপিএম ৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে এটি দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারে।
ডলারের সরবরাহ বাড়ায় আমদানি নির্ভর পণ্যের মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ কমেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে ডলার ১২৩ টাকার আশপাশে লেনদেন হচ্ছে, যা আমদানির ক্ষেত্রেও একই রকম।
ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, রেমিট্যান্সের এই প্রবৃদ্ধিতে সরকারের অবৈধ পথে অর্থ পাঠানো রোধে নেওয়া কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে আয় পাঠাতে প্রণোদনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে এবং ডলারের বাজারে চাপ কমেছে।
লেনদেনের ভারসাম্যেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জুলাই–এপ্রিল সময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪–২৫ অর্থবছরের একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতিও ৫ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি বকেয়া দেনা পরিশোধ হয়ে যাওয়ায় ও লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতি হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ অনেকটাই কেটে গেছে। পাশাপাশি বিদেশি ব্যাংকগুলোর আস্থা ফিরেছে, যা অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
No comments