সংস্কারের কত প্রস্তাবে একমত হয়েছে বিএনপি, জানালেন সালাহউদ্দিন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ দাবি করেছেন, দলটি সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। আজ বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। আলোচনায় বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সালাহউদ্দিন।
তিনি বলেন, “বেশিরভাগ সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গেই আমরা একমত হয়েছি। শতভাগ প্রস্তাবে যদি একমত হতে হয়, তাহলে আলোচনার তো আর দরকার নেই।”
সংসদের স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, “সংসদের চারটি প্রধান স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়া, এই প্রস্তাব বিএনপির পক্ষ থেকেই এসেছে এবং তা আলোচনায় গৃহীত হয়েছে।”
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও জানান, “ভবিষ্যতে দেশে যেন স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে না আসে, সে জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ভারসাম্য থাকা জরুরি—এই নীতিতেও বিএনপি একমত।”
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি যেন আপিল বিভাগের দুই জ্যেষ্ঠ বিচারপতির মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন, এ বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা একমত হয়েছেন।”
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)–সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের ৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টিতে বিএনপি একমত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। বাকি একটির বিষয়ে সামান্য ভিন্নমত রয়েছে। তিনি বলেন, “দুদকের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।”
প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১২৭টিতে সরাসরি একমত হয়েছে বিএনপি। ১৬টি প্রস্তাবে কিছু ভিন্নমত জানানো হয়েছে এবং বাকিগুলোর মধ্যে অল্প কিছু গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দিয়েছে দলটি।
বিচার বিভাগীয় সংস্কারের ৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টিতে একমত হয়েছে বিএনপি। তিনি বলেন, “লোয়ার জুডিশিয়ারি নিয়ে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় আমরা একমত।”
নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারে বিএনপি ২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪০টির বেশি প্রস্তাবে একমত হয়েছে। সালাহউদ্দিন জানান, ভোটার তালিকা, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), পর্যবেক্ষক আইনসহ ১৭টি আইনের বিষয়ে বিএনপি নিজস্ব প্রস্তাবও দিয়েছে।
তিনি বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা এবং আমাদের সঙ্গে থাকা যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছি।”
নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে বিএনপি একটি প্রস্তাব দিয়েছে এবং এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা হয়। সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা নিজেরাই প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে কোনো ব্যক্তি জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে পরে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”
আজকের আলোচনায় বিএনপিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আলোচনার শুরুতে সবাই দাঁড়িয়ে জুলাই শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য) মনির হায়দার। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।
No comments