জুলাই যোদ্ধাদের পাশে সত্যিই কি রাষ্ট্র নয়, জামায়াতই ছিল?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর যোদ্ধাদের জন্য রাষ্ট্র যা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী—এমন মন্তব্য করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব ছিল আহতদের সুচিকিৎসা, শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন এবং গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু সরকার শুধু একটি ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’ গঠন করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। সেই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যে মাসিক ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তা গত এক বছরে কেউই পাননি।
তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামী প্রতিটি শহীদ পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করেছে এবং ‘জুলাই শহীদ’দের স্মরণে ১০ খণ্ডে ১৫০০ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে—যা মূলত রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব ছিল।
নূরুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর যেখানেই কেউ ফ্যাসিস্ট আচরণ করবে, সেখানেই এই আন্দোলন শিক্ষা হিসেবে থাকবে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আজ যারা জুলাই যোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে রাজনীতি করছেন, তারাই আজ সেই যোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করছেন। অথচ গত ১৫ বছরে তারা রাজপথে দাঁড়াতে পারেননি। জামায়াত সব সময়, সব প্রয়োজনে জুলাই যোদ্ধাদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।”
তিনি বলেন, “জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত সাত দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে ফ্যাসিবাদ আবার মাথাচাড়া দেবে, যার লক্ষণ ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে।” তিনি সবাইকে আগামী ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সমাবেশে অংশ নিয়ে সাত দফা দাবি আদায়ে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহত জুলাই যোদ্ধারা বলেন, “জামায়াত ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি, চিকিৎসা বা সাহায্য করেনি। জামায়াত পাশে ছিল, আমরা তা কখনো ভুলব না।”
তারা অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা, গণহত্যার বিচার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্পন্ন করে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৮ আসনের মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর সরকারের দায়িত্ব ছিল আহতদের চিকিৎসা, শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসন, গণহত্যার বিচার এবং সুশাসনের রূপরেখা প্রণয়ন। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের চাপে পড়ে সরকার এসব করতে পারেনি। তারা শুধু নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে।”
তিনি আরও বলেন, “জামায়াত শুরু থেকেই বলেছে, আমরা নির্বাচন চাই। তবে তার আগে গত ১৭ বছরের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মহানগরীর বিভিন্ন থানার আমির, আহত জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদদের পরিবারবর্গ। শহীদ হৃদয়ের মা, শহীদ লিটনের ছোট বোন, শহীদ আল-আমীনের মা, শহীদ কামালের মেয়ে এবং আহত যোদ্ধা রফিকুল ইসলাম রুবেল তাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি তুলে ধরেন।
No comments