Header Ads

ইরানে বিজয়ের উল্লাস

   
     

ইরানে বিজয়ের উল্লাস


ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় ইরানজুড়ে পালিত হচ্ছে বিজয় উৎসব। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর থেকেই ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে দেখা গেছে উচ্ছ্বাসের আবহ।

তেহরানসহ দেশের বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল করে। রাজধানীজুড়ে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাস্তাঘাট। আগুন জ্বালিয়ে, পতাকা ও ধর্মীয় সংগীতের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় ‘জয়’।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। এর পরপরই ইরানের শীর্ষ নেতারা একে ‘ঐতিহাসিক জয়’ হিসেবে বর্ণনা করেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়, যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইরানের বিভিন্ন শহরে বিজয় র‌্যালি ও জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বোনাস পেতে ক্লিক করুন

ইরানের সহ-রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ রেজা আরেফ বলেন, এই বিজয়ের মাধ্যমে ইরান কেবল সামরিক শক্তি নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও প্রমাণ করেছে যে, তারা আমেরিকা ও পশ্চিমা জোটের প্রভাব মোকাবিলা করতে সক্ষম। এটিই ইরানের প্রকৃত শক্তির বহিঃপ্রকাশ।

ইরানের সংসদের স্পিকার ও আইআরজিসি'র (ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড) সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফের উপদেষ্টা মাহদি মোহাম্মাদি একে ‘যুগান্তকারী বিজয়’ বলে উল্লেখ করেন। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “এটি একটি নতুন যুগের সূচনা।”

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি জাতীয় টেলিভিশনে বলেন, “আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেউ আর থামাতে পারবে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আমাদের অগ্রগতির ফলে এই খাত সামনে আরও এগিয়ে যাবে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি ইরানের জন্য কৌশলগতভাবে একটি সফলতা। কারণ, সরাসরি সংঘাত থেকে সরে এসে এখন ইরান শক্ত অবস্থান নিয়ে আলোচনায় বসার সুযোগ পেয়েছে। একইসঙ্গে তারা নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং কূটনৈতিক দক্ষতাও জনগণের সামনে তুলে ধরতে পেরেছে।

ইরানের শহরগুলোতে বিজয় উৎসব উদযাপনের সময় মানুষ ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ইসরায়েল ধ্বংস হোক’ ইত্যাদি স্লোগানে গলা মিলিয়েছে। বহু জায়গায় পতাকা মিছিল, বিপ্লবী গান ও ধর্মীয় সংগীতের মাধ্যমে উদযাপন হয়েছে।

তবে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে এই যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইসরায়েলের বৈরিতা বহু দশকের পুরনো, তাই এই যুদ্ধবিরতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের ভুখণ্ডে হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েলে। সংঘাত যখন চরমে ওঠে, তখন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠার আগে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। উভয় দেশ তাতে সম্মত হয়। এর মাধ্যমে আপাতত এই সংঘাতের অবসান ঘটে।

তেহরান বলছে, এই যুদ্ধবিরতি কেবল সাময়িক বিরতি নয়। এটি বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে, ইরান ভয় পায় না, বরং প্রতিরোধ জানে। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে এখন তারা আরও আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।

মন্তব্য করুন

No comments

Powered by Blogger.