নির্বাচনের তারিখ নয়, সংস্কার ও বিচারই মূল আলোচ্য: এনসিপি
আগামীকাল শুক্রবার লন্ডনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মতে, নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নয়, বরং মৌলিক সংস্কার ও জুলাই আন্দোলনে নিহতদের বিচার—এই বিষয়গুলো আলোচনায় অগ্রাধিকার পাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার লন্ডনে পৌঁছেছেন। নির্বাচনের সময় নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এনসিপির ধারণা, এই বৈঠক ফলপ্রসূ হলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, এবং জুলাই সনদের মতো বিষয়গুলোতে সরকার ও বিএনপির মধ্যে দূরত্ব কমে আসতে পারে।
গতকাল বুধবার এনসিপির তিনজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা জানান, এই বৈঠকে মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার, আওয়ামী লীগের নেতাদের অপরাধের বিচার এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়নই আলোচনার মূল বিষয় হতে হবে। এনসিপি মনে করে, বৈঠক সফল না হলে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের দল এনসিপির একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিএনপি যদি সংস্কার ও বিচারের ব্যাপারে স্পষ্ট ও ইতিবাচক অবস্থান না নেয়, তাহলে জনগণ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। কারণ, মানুষ শুধু ভোটের জন্য জীবন দেয়নি; তারা চেয়েছে একটি নতুন রাষ্ট্র কাঠামো।”
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য এই বৈঠককে সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি এটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন।
এ বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “বৈঠকের প্রকৃত ফলাফল বোঝা যাবে এর পরবর্তী কার্যক্রমের মাধ্যমে। শুধু বৈঠক হলেই হবে না, বাস্তবায়নের দিকটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
গত কয়েক মাসে নির্বাচন ও রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা গেছে। এনসিপির মতে, তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের এই বৈঠক সফল হলে সেই দূরত্ব কমতে পারে। তবে তারা চায়, বিএনপি মৌলিক সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিচার চাওয়ার ব্যাপারে আরও দৃঢ় অবস্থান নিক।
এ প্রসঙ্গে আরিফুল ইসলাম আদীব আরও বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। সেই কাঠামোগত পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় বিএনপির ভেতরে সংকট আছে। আমরা আশা করি, তারেক রহমান বৃহত্তর স্বার্থে সেই আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেবেন—যেখানে নাগরিক মর্যাদা, মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক সংস্কার প্রাধান্য পাবে।”
বৈঠকের পর নির্বাচন কিছুটা এগিয়ে আসতে পারে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে ‘সুবাতাস’ বইতে পারে।
তবে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব মনে করেন, “লন্ডন বৈঠকে আলোচনা হওয়া উচিত—মৌলিক সংস্কার ও বিচার কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে, এবং যেসব সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে, সেগুলো কীভাবে বাস্তব রূপ পাবে। নির্বাচন নয়, এগুলোই হওয়া উচিত মূল আলোচ্য।”
No comments