Header Ads

বেশি বেশি হাই তোলা কীসের লক্ষণ হতে পারে?

        

বেশি বেশি হাই তোলা কীসের লক্ষণ হতে পারে?




আমরা সবাই কমবেশি হাই তুলি। এটি একেবারেই স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রতিক্রিয়া। ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি, বিরক্তি কিংবা উদাসীনতার সময় হাই ওঠা আমাদের প্রায় সবারই হয়। কিন্তু যদি সারাদিন ঘন ঘন হাই উঠতে থাকে, তাহলে এটি শুধু ক্লান্তি নয়—বরং শরীরের আরও গভীর কোনো সমস্যার সংকেত হতে পারে, বিশেষ করে ঘুমের সমস্যার।

আজ আমরা জানব, হাই আসলে কেন হয়, এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে এবং ঘন ঘন হাই তোলা কিভাবে ঘুমের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।


হাই তোলা কী এবং কেন হয়?

হাই তোলা হলো শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যেখানে আমরা মুখ বড় করে হাঁ করি, গভীরভাবে শ্বাস নিই এবং ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়ি। এই প্রক্রিয়াটি অক্সিজেন গ্রহণ ও মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখার সঙ্গে জড়িত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

হাই ওঠার কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  • ক্লান্তি বা নিদ্রালু অনুভব

  • মনোযোগের অভাব

  • দীর্ঘ সময় একটানা কাজ

  • ঘুমের ঘাটতি

  • শরীরের নিজেকে চাঙা রাখার চেষ্টা

এসব কারণে মাঝে মাঝে হাই ওঠা স্বাভাবিক হলেও যদি তা সারাদিন ধরে বারবার ঘটে, তাহলে সেটা উদ্বেগের বিষয়।


ঘন ঘন হাই তোলা ও ঘুমের সমস্যার সম্পর্ক

১. স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)

ঘুমের সময় শ্বাস বারবার বন্ধ হয়ে গেলে এই সমস্যাটি হয়। এতে গভীর ঘুম হয় না, ফলে দিনভর ক্লান্তি ও ঘন ঘন হাই ওঠে।

লক্ষণ:

  • জোরে নাক ডাকা

  • ঘুমের মাঝে শ্বাস বন্ধ হওয়া

  • সারাদিন ঝিম ধরা বা হাই তোলা

২. অনিদ্রা (Insomnia)

ঘুম আসতে দেরি হওয়া, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া বা সকালে তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়া- এগুলো অনিদ্রার লক্ষণ। এর ফলে শরীর পূর্ণ বিশ্রাম পায় না, ফলে সারাদিন হাই ওঠে।

৩. নারকোলেপসি (Narcolepsy)

এটি একটি স্নায়বিক সমস্যা, যেখানে ব্যক্তি হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়ে। যারা এই সমস্যায় ভোগেন, তারা দিনে অনেকবার হাই তোলেন এবং সবসময় দুর্বল বোধ করেন।

৪. রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম (Restless Legs Syndrome)

এই সমস্যায় রাতে পায়ে অস্বস্তি বা খিঁচুনি অনুভব হয়, যা ঘুম ব্যাহত করে। ফলে পরদিন ঘন ঘন হাই ওঠে।


ঘন ঘন হাই তোলার অন্য কারণ

সব সময় ঘুমের সমস্যা থেকেই হাই ওঠে না। নিচের কারণগুলোও দায়ী হতে পারে:

  • উদ্বেগ বা মানসিক চাপ

  • কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • বিষণ্নতা বা হতাশা

  • স্নায়ুবিক রোগ (যেমন: পারকিনসন, মাইগ্রেন)


কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?

নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো থাকলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • ঘন ঘন হাই ওঠে, এমনকি ঘুম ভালো হলেও

  • সবসময় ক্লান্ত বোধ করেন

  • কাজে মনোযোগ থাকে না

  • ঘুমের সময় নাক ডাকা, শ্বাস আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে

চিকিৎসক প্রয়োজনে ঘুমের সমস্যা নির্ণয়ের জন্য ঘুমের টেস্ট বা স্লিপ স্টাডি করতে পারেন।


ঘুম ভালো রাখার কিছু টিপস

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও উঠার চেষ্টা করুন

  • ঘুমানোর আগে মোবাইল বা টিভি ব্যবহার কমান

  • ঘুমানোর আগে চা-কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় কিছু খাবেন না

  • ঘরের আলো, শব্দ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন

  • হালকা ব্যায়াম অভ্যাস করুন, তবে ঘুমানোর আগে নয়


হাই তোলা নিয়ে কিছু মজার তথ্য

  • কুকুর, বিড়াল এমনকি মাছও হাই তোলে!

  • অন্যকে হাই তুলতে দেখলে নিজেরও হাই ওঠে—এটিকে বলা হয় “সংক্রামক হাই”

  • গর্ভবতী মায়ের গর্ভেও শিশুরা হাই তোলে—আল্ট্রাসাউন্ডে তা দেখা গেছে

  • হাই কেন হয়, তা নিয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা একমত নন। অনেকেই মনে করেন, এটি মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।

No comments

Powered by Blogger.