Header Ads

মানুষের হাতে নগদ টাকা আবারও বাড়ছে

    

মানুষের হাতে নগদ টাকা আবারও বাড়ছে


আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশের ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়। এসময় অনেকেই আতঙ্কে ব্যাংকে রাখা টাকা তুলে নিয়ে বাসায় রাখতে শুরু করেন।

এর ফলে ব্যাংকগুলো ভয়াবহ তারল্য সংকটে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের চেষ্টা করে, কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ, অর্থাৎ ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই প্রবণতা চলতে থাকে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ব্যাংকিং খাতে মানুষের আস্থা ফিরে আসতে শুরু করে। এর প্রভাব দেখা যায় সেপ্টেম্বর থেকে। মানুষ আবার ব্যাংকে টাকা রাখতে শুরু করে এবং এই ধারা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

কিন্তু মার্চ মাসে চিত্রটি আবার বদলে যায়। ওই মাসে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ আগের তুলনায় হঠাৎ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়েছে ২৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা।

ব্যাংকের বাইরে টাকা বাড়ার কারণ

ব্যাংকারদের মতে, সাধারণত মানুষ যখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয় এবং সেটি পুনরায় ব্যাংকে জমা দেয় না, তখন সেই অর্থই “ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা” হিসেবে ধরা হয়। মার্চ মাসে ঈদুল আজহা উপলক্ষে মানুষ বেশি নগদ টাকা তুলেছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই টাকাগুলো আবার ব্যাংকে ফিরে আসবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন।

নগদ টাকার ওঠানামার বিস্তারিত চিত্র

২০২৩ সালের আগস্টে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। পরবর্তী মাসগুলোতে এই অঙ্ক কমতে থাকে।

  • সেপ্টেম্বর: ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ

  • অক্টোবর: ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি ৭ লাখ

  • নভেম্বর: ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬ কোটি ৭ লাখ

  • ডিসেম্বর: ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি ৫ লাখ

  • জানুয়ারি: ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ কোটি ৯ লাখ

  • ফেব্রুয়ারি: ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি ৬ লাখ

কিন্তু চলতি বছরের মার্চে এই অঙ্ক হঠাৎ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি ৬ লাখ টাকায়।

নগদ অর্থের বেড়ে চলার ধারাবাহিকতা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছিল। কিন্তু নভেম্বরে আবার তা বাড়তে শুরু করে এবং আগস্ট ২০২4 পর্যন্ত সেই প্রবণতা অব্যাহত থাকে।

  • অক্টোবর: ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি

  • নভেম্বর: ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি

  • ডিসেম্বর: ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি

  • জানুয়ারি: ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ কোটি

  • ফেব্রুয়ারি: ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি

  • মার্চ: ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি

  • এপ্রিল: ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি

  • মে: ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি

  • জুন: ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি

  • জুলাই: ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৩০ কোটি

  • আগস্ট: ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি ৪ লাখ

ফলে দেখা যাচ্ছে, এই দশ মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ অর্থ বেড়েছে মোট ৪৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

মূল্যস্ফীতির প্রভাব ও আস্থার সংকট

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের খরচ বেড়েছে। তাই প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। সেই সঙ্গে কিছু ব্যাংকের দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি ও অব্যবস্থাপনার কারণে জনগণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারানোর প্রবণতাও দেখা দিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং স্থিতিশীলতার ফলে মানুষ আবার ব্যাংকে টাকা রাখতে শুরু করেছে।

মুদ্রা সরবরাহও বেড়েছে

মানুষের হাতে নগদ অর্থ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সার্বিকভাবে বাজারে মুদ্রা সরবরাহের পরিমাণও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী,

  • ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ মানি ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ কোটি ৯ লাখ টাকা

  • মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ২ হাজার ৭৩৩ কোটি ৬ লাখ টাকায়

অর্থাৎ, মাত্র এক মাসে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে ২৮ হাজার ১৩০ কোটি ৭ লাখ টাকা।

No comments

Powered by Blogger.