Header Ads

নির্বাচনের দিকে পুরোদমে এগোচ্ছে ইসি, চলছে নানা প্রস্তুতি

   

নির্বাচনের দিকে পুরোদমে এগোচ্ছে ইসি, চলছে নানা প্রস্তুতি


 


সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ তথ্য জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ। তিনি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, নির্বাচনী আইন সংশোধনের কাজ চলছে, যেন নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

তিনি আরও জানান, “আমরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করব।”

চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, “নির্বাচন আয়োজন একটি কঠিন কাজ হলেও তা অসম্ভব নয়। সতর্কতার সঙ্গে সবকিছু সম্পন্ন করতে হবে।” তিনি জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসি ইতিমধ্যে নানা ধাপে কাজ শুরু করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে বক্তব্য দেন। যদিও তিনি ২০২৫ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেন, পরবর্তীতে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ২০২৬ সালের রমজানের আগেই নির্বাচন হতে পারে। তবে তার জন্য যথেষ্ট সংস্কার ও বিচার কার্যক্রমে অগ্রগতি প্রয়োজন।

ইসির প্রস্তুতি

লন্ডন বৈঠকের পর ইসি ২০২৬ সালের এপ্রিল অথবা তার আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করে। এ লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

১৫ জুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, “নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারিত সময়েই ঘোষণা করা হবে। এখন আমাদের মনোযোগ প্রস্তুতির দিকেই।” তিনি বলেন, “আমাদের কর্মপরিকল্পনা অনেকেই ‘রোডম্যাপ’ হিসেবে দেখেন। এতে প্রতিটি কাজের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে।”

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনী সীমানা পুনঃনির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র সংস্কার, সরঞ্জাম কেনাকাটা, রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, আইন ও বিধিমালা সংশোধন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কাজ পুরোদমে চলছে।

পরিকল্পনার আরও কিছু দিক

ইসি অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, নির্বাচনী ম্যানুয়েল ও নির্দেশিকা হালনাগাদ এবং নির্বাচনী আইন সংশোধনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তুতি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কমিশনের এক সূত্র জানায়, তারা সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের অপেক্ষায় আছে।

১৭ জুন কমিশন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালার খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। এতে পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, বিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ১.৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা হয়েছে।

ভোটার তালিকা ও সীমানা নির্ধারণ

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ৭৬টি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শিগগিরই শেষ হবে। এ বিষয়ে কমিশনে জমা পড়েছে ৬৩৮টি আবেদন।

কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩০ জুনের মধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে। এ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

মালামাল কেনাকাটা ও টেন্ডার

ভোটে ব্যবহৃত সামগ্রী যেমন ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, সিল, খাম, কলম, স্ট্যাম্প প্যাড, গালা, মোমবাতি, দেশলাই, কাগজ ইত্যাদির কেনাকাটার প্রক্রিয়া চলছে। ব্যালট পেপারের কাগজ কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে এবং ছাপার কাজ সরকারি ছাপাখানায় সম্পন্ন হয়।

ইসি জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সামগ্রীর টেন্ডার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে, এবং জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া সম্ভব হবে।

নতুন রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক

২২ জুন পর্যন্ত নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, এবং তাতে ৬৫টি দল আবেদন করে। পরে সময় বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত করা হয়।

সার্বিক মূল্যায়ন

কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, “ভোটার তালিকা, সীমানা নির্ধারণ, আচরণবিধি চূড়ান্ত, সরঞ্জাম ক্রয় প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। ভোট কেন্দ্র নির্মাণ, পর্যবেক্ষক নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত। আশা করছি, আগামী মাসের শুরুতেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।”

সার্বিকভাবে নির্বাচন কমিশন এখন একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত আসার পরপরই ইসি তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন আয়োজনের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।

No comments

Powered by Blogger.