Header Ads

এ সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি

 

এ সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি




একটি ঐতিহাসিক ‘জুলাই সনদ’ গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “এই সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি।”

সোমবার বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার শুরুতেই এ মন্তব্য করেন তিনি। আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে। এতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে গঠিত হয় সংস্কার কমিশন। পরে ঐ কমিশনের ভিত্তিতে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দফার আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ তাঁকে উৎসাহিত করেছে। তিনি জানান, প্রথমে ধারণা ছিল রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো গভীরভাবে আলোচনায় অংশ নেবে না। কিন্তু বাস্তবে দলগুলো যে আন্তরিকভাবে যুক্ত হয়েছে, সেটি দেখে তিনি আনন্দিত।

তিনি আরও বলেন, “অনেক বিষয়ে আমরা কাছাকাছি পৌঁছেছি। আর একটু অগ্রসর হতে পারলে ঐকমত্যের সুপারিশে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব যুক্ত করা যাবে। এই মুহূর্তটি আমাদের হাতছাড়া করা উচিত নয়।”

দ্বিতীয় পর্বে যে বিষয়গুলোতে এখনো মতপার্থক্য রয়ে গেছে, সেগুলো মেটানোর আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “দূরত্ব যেটুকু আছে, সেটা ঘুচিয়ে এমন একটি জুলাই সনদ তৈরি করতে চাই, যেখানে জাতীয় ঐকমত্যের প্রতিফলন থাকবে। এটা হবে একটি চমৎকার দলিল।”

রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সারা দিনে যত মিটিং করি, আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারলে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই। কারণ এখানে আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে অংশ নিচ্ছি। এতে আমি গর্বিত বোধ করি যে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমি যুক্ত থাকতে পেরেছি।”

ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর কমিশনের পক্ষ থেকে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ঈদুল আজহার আগে একদিন এবং ঈদের পরে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চলবে। বিশেষ গুরুত্ব পাবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের এমন কিছু মৌলিক প্রস্তাব, যেগুলোতে এখনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই আলোচনার মাধ্যমে জুলাই মাসেই ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে কমিশনের।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর মাসে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কার নিয়ে ছয়টি কমিশন গঠন করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়।

এই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পুলিশ সংস্কার কমিশন ছাড়া বাকি পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয় মতামত গ্রহণের জন্য।

এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত চলে প্রথম পর্বের আলোচনা। এই সময়ে ৩৩টি দলের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। আলোচনার অগ্রগতি তুলে ধরতে ২৬ মে এক সংবাদ সম্মেলন করে ঐকমত্য কমিশন। সেখানে প্রথম ধাপের আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে হয়নি, সেগুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে:

  • বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো

  • তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ

  • তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ

  • জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন

  • একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন

  • একজন সংসদ সদস্য কতগুলো পদে থাকতে পারবেন

  • রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি

  • সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া

তবে এই বিষয়ে অনেক রাজনৈতিক দল ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে এবং আরও আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষে, প্রধানমন্ত্রী ইউনূস আবারও সবাইকে সতর্ক করে বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সবাই যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখে, তাহলে আমরা একটি ঐতিহাসিক জাতীয় দলিল তৈরি করতে পারব—যেটি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নতুন পথে পরিচালিত করবে।”

No comments

Powered by Blogger.