Header Ads

চালের দাম বেড়ে বিপাকে সাধারণ মানুষ

 

     

চালের দাম বেড়ে বিপাকে সাধারণ মানুষ

নওগাঁয় হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভরা মৌসুমেও নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে গেলে তাদের মুখে হয়তো কোনো অভিযোগ শোনা যাচ্ছে না, তবে চোখেমুখে স্পষ্ট অস্বস্তির ছাপ।

দেশের অন্যতম ধান-চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে চালের দাম প্রকারভেদে ২ থেকে ৪ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

চালের এই আকস্মিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কেউ দুষছেন মিলারদের গোপন সিন্ডিকেটকে, কেউ বলছেন ধানের দাম বাড়ায় এমনটা হয়েছে, আবার কেউ বলছেন বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণের অভাবই এর জন্য দায়ী। তবে ক্ষুদ্র খুচরা ব্যবসায়ীরাও এ দাম বৃদ্ধি মেনে নিতে পারছেন না।

নওগাঁর খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের মতে, ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বড় মিলারদের মজুত এবং সিন্ডিকেট কার্যক্রমের অবাধ বিস্তার। মিলারদের বিরুদ্ধে মজুতবিরোধী অভিযান না থাকায় তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে ভোক্তাদের ওপর।

নওগাঁ শহরের আড়তদারপট্টির পাইকারি বাজারে চালের দাম মানভেদে প্রতি কেজিতে ২-৪ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে:

  • জিরাশাইল: ৬৮-৭০ টাকা

  • কাটারি: ৭০-৭২ টাকা

  • শুভলতা: ৬০-৬২ টাকা

  • ব্রি আর-২৮: ৬২-৬৪ টাকা

  • স্বর্ণা-৫: ৫৫-৫৬ টাকা

যেখানে এক সপ্তাহ আগে এই চালগুলো বিক্রি হচ্ছিল যথাক্রমে ৬৪-৬৬, ৬৬-৬৮, ৫৭-৫৮, ৫৯-৬০ ও ৫৩-৫৪ টাকা কেজিতে।

অপরদিকে, পৌর ক্ষুদ্র চালবাজারে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম এখন:

  • জিরাশাইল: ৭০-৭২ টাকা

  • কাটারি: ৭৫-৮০ টাকা

  • শুভলতা: ৬২-৬৪ টাকা

  • ব্রি আর-২৮: ৬৫-৬৬ টাকা

  • স্বর্ণা-৫: ৫৮-৬০ টাকা

যা এক সপ্তাহ আগে ছিল যথাক্রমে ৬৫-৬৬, ৭০-৭২, ৫৭-৫৮, ৫৯-৬০ ও ৫২-৫৪ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ প্রকারভেদে চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৮ টাকা।

পৌর ক্ষুদ্র চালবাজার সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ধান কিনে মজুত করছে। ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা বাজারে টিকতে পারছেন না। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত ধান মজুত থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টন ধান মজুত করে রাখছে, অথচ আগে যেখানে কয়েকটি অটোগাড়িতে চাল আসতো, এখন ২০ বস্তা চাল জোগাড় করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মিলাররা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চাল দিচ্ছে না বললেই চলে। সরকারের নজরদারি না থাকায় এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।

মেসার্স তাপস খাদ্য ভান্ডারের প্রোপাইটার তাপস কুমার মন্ডল বলেন, মিলাররা এখন পর্যাপ্ত চাল দিচ্ছে না। চাহিদা দিলে ২০ বস্তার জায়গায় দিচ্ছে মাত্র ৫-৭ বস্তা, তাও ২০০-৪০০ টাকা বেশি দামে। ফলে খুচরা পর্যায়ে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজিতে ৫-৬ টাকা বেশি দামে।

চালের পাইকারি ব্যবসায়ী সততা রাইস এজেন্সির সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় সরকারের মজুত নীতিমালাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না অনেক অসাধু ব্যবসায়ী। বোরো মৌসুমের শুরুতেই করপোরেট ব্যবসায়ীরা অর্ধেকের বেশি ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন। এতে সাধারণ মিলারদের হাতে ধান নেই বললেই চলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বেড়েছে।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, চালের দাম কিছুটা বেড়েছে ঠিকই, তবে ব্র্যান্ডিং কোম্পানির চালের দাম ৬-৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, যা চালের দামের ওপর প্রভাব ফেলছে। তবে তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণে চান, এবং বলেন যে কিছু মিলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং যেখানে অতিরিক্ত মজুত আছে সেখানে অভিযান চালানো উচিত।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে খাদ্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে যদি অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

সার্বিকভাবে বলা যায়, ভরা মৌসুমেও নওগাঁয় চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে বাজারে নজরদারির অভাব, মিলারদের মজুত এবং সিন্ডিকেট প্রভাবই মূল কারণ। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.