আমি এখন জাতীয় ভিলেন
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, তিনি এখন এক প্রকার “জাতীয় ভিলেন” হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুক্রবার (৬ জুন) জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অনেক বড় বড় ব্যারিস্টাররা বলছেন, আমি তো এখন জাতীয় ভিলেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস, একদিন জনগণ বুঝবে কেন আমি এই পদক্ষেপ নিয়েছি।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) কোনো আইনি ফাঁকফোকর পাচ্ছে না। হ্যাঁ, মেয়রদের অপসারণ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু যারা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত ছিলেন তারাই অপসারিত হয়েছেন।”
ইশরাক আরও বলেন, “কোনো চিঠিতে লেখা নেই যে সব নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে। আর আমার বিষয়টি তো ছিল সাব জুডিস (আদালতে বিচারাধীন), এটি নির্বাহী আদেশে বাতিল করা যায় না। অনেক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, অনেককে মাঠে নামানো হয়েছে।”
পটভূমি
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিজয়ী হন। কিন্তু নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ইশরাক হোসেন ওই ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ আদালতে মামলা করেন।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। পরে ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে ইশরাককে মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
কিন্তু ১৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ—যাতে ইশরাককে শপথ না পড়ানো হয়। ওই দিনই ইশরাকের সমর্থকেরা শপথের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
আইনি জটিলতা ও প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনি জটিলতার কথা বলে এখনো শপথের আয়োজন করেনি। এতে ক্ষোভ জানিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক। এর মাঝে হাইকোর্ট ২২ মে মামলাটি সরাসরি খারিজ করে দেন, রিটকারীর আইনগত এখতিয়ার না থাকায়।
পরে রিটকারী মামুনুর রশিদ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন।
এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, “নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি।” বিশেষ করে কমিশন যখন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায়, তখন সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় আদালত থেকে। কারণ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, বরং মন্ত্রণালয়কে কমিশনের সহায়তা করার কথা।
ভবিষ্যত অনিশ্চয়তা
এই সব জটিলতা এবং বিচারিক সিদ্ধান্তের পরও এখনো স্পষ্ট নয়, ইশরাক হোসেন বাস্তবে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন কি না।
তবে ইশরাকের বিশ্বাস, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনগণ তার অবস্থান ও সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ বুঝবে। তিনি বলেন, “আমি যা করেছি, দেশের স্বার্থে করেছি। এখন ভিলেন মনে হলেও, সত্য একদিন স্পষ্ট হবেই।”
No comments