Header Ads

জুলাই আন্দোলনের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি: নাহিদ ইসলাম

         

জুলাই আন্দোলনের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি: নাহিদ ইসলাম


  


গত বছরের ১ জুলাই শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান’ ছিল দেশের রাজনীতিতে বড় এক ঘটনা। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হন এবং এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। বর্ষপূর্তিতে তিনি প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, সাফল্য–অসাফল্য, ভবিষ্যৎ ভাবনা এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো।


এখনও সব ঘটনা সামনে আসেনি

নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই আন্দোলন ও অভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের জন্য ইতিহাসগড়ার সময়। তবে এখনো সব তথ্য প্রকাশের উপযুক্ত সময় আসেনি। আন্দোলনের নেপথ্যের অনেক বিষয় এখনো সামনে আসেনি। রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা কিছুটা সীমাবদ্ধ।”


‘জুলাই’ কারও কাছে শেষ, আমাদের কাছে শুরু

তিনি বলেন, “অনেকেই মনে করেন আওয়ামী লীগের পতনই ছিল আন্দোলনের চূড়ান্ত অর্জন। কিন্তু আমাদের কাছে সেটা কেবল শুরু। আমরা চেয়েছি ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ও নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সরকার গেছে, কিন্তু সেই পুরোনো ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে। সেখানেই আমাদের মূল লড়াই।”


কেন কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব হয়নি?

নাহিদ বলেন, “প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। আমাদের সংগঠন তখন পুরোপুরি গঠিত ছিল না। ৫ আগস্টের পর সংগঠনের চেষ্টা করা হলেও বাধার মুখে তা সফল হয়নি। ছাত্রদের একত্র করে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল, সরকার এবং অধ্যাপক ইউনূস—সবার মধ্যে এক ধরনের অলিখিত ঐক্য হয়েছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরে সেই ঐক্য ভেঙে যায়। সবাই নিজের এজেন্ডায় চলে যায়।”


আইনশৃঙ্খলা ও ‘মব’ প্রসঙ্গে

নাহিদ বলেন, “পুলিশ ও সেনাবাহিনী চেষ্টা করছে, কিন্তু সব জায়গায় সক্রিয়তা নেই। যাদের ‘মব’ বলা হচ্ছে, তারা আসলে বিক্ষুব্ধ জনগণ। সঠিক কর্মসূচি আর নেতৃত্ব না থাকায় তারা বিভ্রান্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি।”


শহীদদের তালিকা এখনো অসম্পূর্ণ

তিনি বলেন, “সরকার যে তালিকা করছে, সেটা জনসমক্ষে আনা উচিত। যেন সবাই জানে কতজন শহীদ, কতজন নিখোঁজ। পুনর্বাসনে বাজেট বরাদ্দ থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেকেই সুবিধা পাচ্ছেন না। জুলাই ইতিহাস সংরক্ষণে সরকারের ভূমিকা আরও প্রয়োজন।”


ছাত্র ঐক্য ভেঙে যাওয়ার পেছনে কারণ কী?

“আন্দোলনের সময় বহু ছাত্রসংগঠন একসঙ্গে ছিল না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো সর্বদলীয় জোট ছিল না। ক্ষমতা আর সুযোগ না পাওয়া নিয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ। তবে জাতির প্রয়োজন হলে সবাইকে আবার একজোট হতে হবে।”


সরকারের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন

“এই সরকার মূলত ছাত্রদের সমর্থন পেয়েছে, অন্য দলগুলো পাশে ছিল না। সেনাবাহিনী থেকেও প্রত্যাশিত সহযোগিতা আসেনি। শিক্ষার্থীরা সংগঠিত ছিল না, আবার হতে দেওয়া হয়নি।”


জুলাই ঘোষণাপত্র হয়নি, এখন নিজেরাই দেবে

“সরকার দুই দফায় প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো জুলাই ঘোষণাপত্র দেয়নি। এখন আমরা নিজেরা অভ্যুত্থানকারীদের নিয়ে ঘোষণাপত্র দেব। ৫ আগস্টের মধ্যে সেটি প্রকাশ করব।”


দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে

“শুরুর দিকে দুর্নীতি ছিল না। পরে কিছু ছাত্র এবং পুরোনো রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী এর সঙ্গে জড়িত হয়। মিডিয়া ট্রায়াল করে আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি ধ্বংসের চেষ্টা হয়েছে।”


এনসিপি গঠনের পর মাঠের বাস্তবতা

নাহিদ বলেন, “মানুষের দিক থেকে সাড়া ভালো। কিন্তু আমরা সাংগঠনিকভাবে অনেক সীমাবদ্ধতায় আছি। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।”


ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ

“এটা পুরোনো অপপ্রচারের অংশ। আমাদের রাজনীতি স্পষ্ট—মধ্যমপন্থী গণতন্ত্র। একাত্তর, নারী ও ইসলামের বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। পুরোনো ফ্রেমে বিচার না করাই ভালো।”


অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা

“নারীরা ছিল আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি। তাই তাদের চরিত্রহননের চেষ্টা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও গণমাধ্যম এর পেছনে ছিল।”


নির্বাচনের পরিকল্পনা

“আমরা এখনো নির্বাচনে এককভাবে না জোটবদ্ধভাবে অংশ নেব—সেটা ঠিক করিনি। আগে সংগঠন গড়ে তুলতে চাই। আদর্শিক মিল থাকলে ভবিষ্যতে জোট হতে পারে।”


পুরোনো রাজনৈতিক ধারায় ফেরা নয়

“আমাদের ছাত্র উপদেষ্টারা কোনো অযাচিত সরকারি সুবিধা নেননি। আমি নিজে উপদেষ্টা থাকাকালে একটিও বিদেশ সফর করিনি। স্বচ্ছতা রাখতে সব তথ্য প্রকাশ করেছি। আমাদের পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে আপস করার ইচ্ছা নেই।”


এই ছিল নাহিদ ইসলামের সাক্ষাৎকারের মূল কথাগুলো। তিনি বলছেন, “জুলাই আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের সামনে এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করা।”


সংক্ষেপে মূল পয়েন্ট:

  • জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের কাছে শুরু মাত্র

  • অর্জন আছে, তবে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এখনো হয়নি

  • ঐক্য ভেঙে যাওয়ায় সাফল্য থেমে গেছে

  • এনসিপি নতুন রাজনৈতিক পথের প্রতিনিধি হতে চায়

  • নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, সিদ্ধান্ত ৫ আগস্টের পর

  • সরকার ও ছাত্রদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে

  • পুরোনো শাসনব্যবস্থার অবসান এখনো হয়নি

No comments

Powered by Blogger.