Header Ads

৯ মাসে পুঁজিবাজারে ৫৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

      

৯ মাসে পুঁজিবাজারে ৫৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি






বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অতীতে দু’বার ভয়াবহ ধসের মুখোমুখি হয়েছে—প্রথমবার ১৯৯৬ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০১০ সালে। দুই দশকের ব্যবধানে এই দুটি ধসে লক্ষ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হন। সেসব ঘটনার পর একাধিক তদন্ত হলেও কার্যকর কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারের যে অবস্থা, তা পূর্বের দুই ধসের চেয়েও শোচনীয় বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।


⚠️ ১৯৯৬ সালের ধস: একটি পরিকল্পিত কারসাজির ফল

১৯৯৬ সালে ডিএসইর সূচক হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। সাধারণ মানুষ এটিকে স্বর্ণখনি ভেবে বিনিয়োগ শুরু করে। পরবর্তীতে জানা যায়, এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত কারসাজি। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে কিছু প্রভাবশালী ব্রোকার হাউস কৃত্রিমভাবে শেয়ারদর বাড়িয়ে দেয়। তখন সূচক সর্বোচ্চ ৩,৬৪৮ দশমিক ৭৫ পয়েন্টে উঠলেও পরে তা ৭৫১ দশমিক ৪১ পয়েন্টে নেমে আসে। তদন্ত হলেও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ পায়নি।


⚠️ ২০১০ সালের ধস: পাম্প অ্যান্ড ডাম্প কৌশল

২০০৯ সালে নতুন সরকার গঠনের পর পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়। কিন্তু ২০১০ সালের মাঝামাঝি থেকে শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী ‘পাম্প অ্যান্ড ডাম্প’ কৌশলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভুল বুঝিয়ে বিপুল অর্থ তুলে নেয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সূচক ৮,৯১৮ পয়েন্টে ওঠে। এরপর মাত্র কয়েকদিনেই তা নেমে যায় ৪,৫৬৮ পয়েন্টে। অনেক বিনিয়োগকারী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়।


🛑 সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপ

উভয় ধসের পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ক্ষমতা বাড়ানো হয়, স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং ব্যবস্থা চালু হয়, বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিল গঠন করা হয়। তবে এসব পদক্ষেপ কার্যকর ফল দেয়নি বলেই দাবি করছেন বিশ্লেষকরা।


⚠️ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার চিত্র

১ ডিসেম্বর ২০২৩-এ প্রকাশিত শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এসব প্রতারণা, আইপিও দুর্নীতি এবং প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি হয়েছে বিএসইসি ও তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের সময়ে।

২০২৪ সালের ২৯ মে বাজার সূচক ছিল ৫,২২৮ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। তবে শেখ হাসিনার পতনের খবর বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ৫ আগস্ট ২০২৪, বাজার সূচক বেড়ে দাঁড়ায় ৫,৪২৬ পয়েন্টে এবং লেনদেন পৌঁছায় ৭৫০ কোটি টাকায়। এরপর কয়েকদিনের মধ্যেই সূচক পৌঁছে ৬,০১৫ পয়েন্টে এবং লেনদেন হয় ২ হাজার ১০ কোটি টাকার।


🧑‍💼 রাশেদ মাকসুদের সময়কাল: ৯ মাসে আস্থা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা

২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিশন দায়িত্বে এসে পুরনো দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে এবং শত শত কোটি টাকার জরিমানা করে। কিন্তু ৯ মাসে একটি টাকাও আদায় হয়নি। জরিমানা আদায় না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়।

তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের দিন সূচক ছিল ৫,৭৭৮ পয়েন্ট। এরপর সূচক ক্রমাগত পতনে গিয়ে ২৫ মে ২০২৫-এ দাঁড়ায় ৪,৭০৯ পয়েন্টে। লেনদেনও নেমে আসে ২৩৫ কোটি টাকায়। ৯ মাসে বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৫৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকা—৭ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৪ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।


📉 ২০১০-এর চেয়েও খারাপ অবস্থা

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “২০১০ সালে ব্যাংক ও জীবন বীমা খাত ভালো ছিল, এখন তা বিপরীত। এনবিএফআই কোম্পানিগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। মৌলিক দিক থেকে বর্তমান পরিস্থিতি তখনকার চেয়েও খারাপ।”

ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, “৯৬ ও ২০১০ সালের ধসের চেয়েও এখন অবস্থা খারাপ। অনেক ব্রোকারেজ হাউস অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে, অনেক শাখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”


😔 বিনিয়োগকারীদের করুণ বাস্তবতা

একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, “কয়েকটি শাখা বন্ধ করতে হয়েছে, কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। বাজারে ঈদের কোনো আনন্দ ছিল না।”
বিনিয়োগকারী শিমুল আহমেদ বলেন, “আমি সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে গেছি। ঈদের দিনেও কোনো আনন্দ পাইনি। যা বিনিয়োগ করেছিলাম, তা প্রায় শেষ। এখন শুধু হতাশা রয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.