নির্বাচনের আগে কঠোর বার্তা দিলেন তারেক রহমান
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট করে দিয়েছেন—যে কোনো ধরনের অপকর্ম, বিশৃঙ্খলা বা জনঅপ্রিয় কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে, তারা যত বড় ত্যাগী নেতাই হোন না কেন।
গত সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মিডিয়া সেলের আয়োজনে এক কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। কর্মশালায় বিএনপি নেতা এবং দলঘনিষ্ঠ পেশাজীবীরা অংশ নেন।
অপকর্মে জড়ালে শাস্তি নিশ্চিত
তারেক রহমান জানান, কমিটি গঠন কিংবা সাংগঠনিক আধিপত্য বিস্তার—কোনো কিছুতেই বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না। অপরাধে জড়িত হলে শুধু দলীয় নয়, প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, "দুই-চারজন অপকর্মকারীর জন্য পুরো দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে, আমাদের মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে। আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণে, গুণ্ডামি করতে নয়।"
নরসিংদী-গাজীপুরে সংঘর্ষে ক্ষোভ
কর্মশালায় সম্প্রতি নরসিংদী ও গাজীপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় তারেক রহমান দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নরসিংদীর পলাশে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কমিটি নিয়ে বিরোধে ১০ জন আহত হন।
তিনি বলেন, এসব ঘটনা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। কালিয়াকৈরের ঘটনায় তিনি তাৎক্ষণিকভাবে আইনি পদক্ষেপের নির্দেশ দেন।
মানুষের মন জয়েই হবে বিজয়: তারেক রহমান
তারেক রহমান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, "অনেকে ধরে নিচ্ছে, আওয়ামী লীগ তো নেই, বিএনপি-ই ক্ষমতায় আসবে। ভোটটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা। এই আত্মতুষ্টি আত্মঘাতী হতে পারে। ভোটকে ভোট হিসেবেই নিতে হবে। মানুষের মন জয় করেই ভোট নিতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "বিএনপি আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি করে না, মানুষও সেটা পছন্দ করে না। সবার কাছে আমার এই বার্তা পৌঁছে দিন।"
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিচার হবে
আলোচনায় উঠে আসে, আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সরকার গঠন করলে দুর্নীতি, লুটপাট, টাকা পাচার, গুম-খুন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হবে।
তিনি বলেন, "বাইরের দুনিয়াকে বুঝাতে হবে, বাংলাদেশ দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় দেয় না।"
নির্বাচনের প্রস্তুতি ও ১৮০ দিনের পরিকল্পনা
বিএনপির প্রত্যাশা—জনগণের ভোটে সরকার গঠন করা। সেই লক্ষ্যেই দলটি প্রথম ১৮০ দিনের জন্য একটি অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে।
এই পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে:
-
শিক্ষাব্যবস্থা
-
স্বাস্থ্যসেবা
-
নারীর ক্ষমতায়ন
-
কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন
-
শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত
-
প্রবাসী কল্যাণ
-
নগর ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা
-
আইনশৃঙ্খলা
এছাড়া বিএনপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা সরকার গঠন করলে প্রথম ১৮ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে এবং ২০৩৪ সালের মধ্যে জিডিপিকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবে।
অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরা হয়
কর্মশালায় বলা হয়, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিনিয়োগ নেই, আয় কমেছে, কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে। গত এক বছরে ১ লাখ পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।
বক্তারা বলেন, অর্থনীতি এখন দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটা মোকাবিলায় বিএনপিকে সুপরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।
কর্মশালায় কারা ছিলেন
এই কর্মশালায় অংশ নেন—
-
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (স্থায়ী কমিটির সদস্য)
-
শামসুজ্জামান দুদু (ভাইস চেয়ারম্যান)
-
ড. সুকোমল বড়ুয়া (চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা)
-
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি (যুগ্ম মহাসচিব)
-
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স (যুগ্ম মহাসচিব)
-
ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক)
-
রুমিন ফারহানা ও অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক)
-
শহীদুল ইসলাম বাবুল (কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক)
-
অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম (উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য)
-
অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য)
-
অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য)
-
সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজসহ অনেকে
সমঝোতা ও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আলোচনা
জানা গেছে, কর্মশালার একপর্যায়ে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনায় নির্বাচনের সময়সূচি এগিয়ে আসার বিষয়ে ঐকমত্যের কথাও উঠে আসে।
তারেক রহমানের আহ্বান
তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় আসছে—এই আত্মতৃপ্তিতে বসে থাকলে চলবে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতাদের করণীয় ঠিক করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা জনগণের কাছে দায়িত্বশীল বক্তব্য দিচ্ছেন, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রস্তুত হতে হবে। দল ও দেশের জন্য আপনাদের আরও সচেতন ভূমিকা দরকার।”
এইভাবে, কর্মশালায় তারেক রহমান বিএনপির ভেতরের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি রক্ষার পাশাপাশি আগামীর নির্বাচনে জনগণের মন জয় করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, অপকর্মকারীর স্থান বিএনপিতে নেই—তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
No comments