বাংলাদেশে পুশইন, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতি বৈষম্য ও হয়রানির অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার দাবি, বাংলা ভাষায় কথা বললেই অনেককে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ‘পুশইন’ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এসব অভিযোগ তোলেন মমতা। একইসঙ্গে তিনি চলমান ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। খবর দিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
মমতা প্রশ্ন তুলে বলেন, “বাংলা ভাষায় কথা বললেই কি কেউ বাংলাদেশি হয়ে যায়? এটা কি কোনো অপরাধ? বাংলাদেশে মানুষ বাংলা বলে, ঠিক আছে। কিন্তু তারা তো একটি আলাদা দেশের নাগরিক। ভারতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও আমাদের শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় দেড় কোটি শ্রমিক ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করেন। কিন্তু এখন তাদের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে।
তিনি আরও জানান, “আজকেও খবর পেয়েছি, রাজস্থানে পশ্চিমবঙ্গের ৩০০ শ্রমিককে বাংলাদেশি বলে আটক করা হয়েছে। শুধু রাজস্থান নয়, ভারতের নানা রাজ্যেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমরা অনেককেই উদ্ধার করতে পেরেছি।
বাংলাদেশে ‘পুশইন’ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, “আমার রাজ্যের অনেক বাসিন্দাকে বাংলাদেশি হিসেবে বন্দি রাখা হচ্ছে এবং সীমান্ত দিয়ে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। অথচ তারা ভারতের নাগরিক এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বাংলা ভাষায় যারা কথা বলেন, তারা কী দোষ করেছেন? স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু—তারা তো বাংলাতেই কথা বলতেন। আজ বাংলাকে দেখলেই যদি অত্যাচার করা হয়, তাহলে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হোক—বাংলা ভাষা নিষিদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলা ভাষার প্রতি বিদ্বেষ কখনো মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সবাই ভারতীয়। ভাষা দিয়ে মানুষকে বিভক্ত করা ঠিক নয়।”
এদিন বিধানসভায় মমতা জানান, সোমবার (২৩ জুন) নবান্নে তার সঙ্গে দেখা করেছেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ। তিনি বলেন, “আমি কখনো বেআইনি কিছু করি না। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই।”
এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে তিনি বোঝাতে চান—বাংলাদেশের সঙ্গে তার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তবে তা কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষেই।
এছাড়াও, বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করে মমতা বলেন, “বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ-সংঘাত বেড়ে চলেছে। এর প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। জল, বাতাস ও আবহাওয়া দূষিত হচ্ছে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে সামনে আরও বড় বিপর্যয় আসবে।”
তিনি সাফ জানান, “বৈদেশিক বা কূটনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার আমার নেই। তবে একজন বিশ্বনাগরিক হিসেবে আমি উদ্বিগ্ন।”
মমতা আরও বলেন, “ভারতই প্রথম দেশ যারা প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (PLO)-কে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ইয়াসির আরাফাত এসেছিলেন আমাদের দেশে। আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার কাজে রাজীব গান্ধী আমাকে অ্যাঙ্গোলায় পাঠিয়েছিলেন।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় কূটনীতির মানবিক এবং অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
No comments