Header Ads

খামেনির বিপদ কাটেনি, এবার সামাল দিতে হবে নিজ জাতির ক্ষোভ

   

খামেনির বিপদ কাটেনি, এবার সামাল দিতে হবে নিজ জাতির ক্ষোভ


         

যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছালেও ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের ইতি মানেই আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির জন্য সব সংকট কেটে গেছে—এমনটা নয়। এবার তাকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে নিজ দেশের মানুষের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও হতাশা। যদি তিনি তা সামাল দিতে ব্যর্থ হন, তবে এটি ইসরায়েলের আরেকটি কৌশলগত সাফল্য হিসেবে গণ্য হবে।

দেশের ভেতরে এবং প্রবাসে ক্ষোভ
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হলেও খামেনির ওপর রাজনৈতিক চাপ অনেক বেড়ে গেছে। ইরানের ভেতরেই নয়, প্রবাসী ইরানিদের মাঝেও নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বহু ইরানি মনে করেন, ধর্মীয় শাসনের পাঁচ দশক পরে এখন ইরানে শাসন পরিবর্তনের সময় এসেছে।

‘তেহরানজেলেস’ থেকে শাসন পরিবর্তনের ডাক
লস অ্যাঞ্জেলেসে ইরানিদের বসবাসরত এলাকায়, যেটি ‘তেহরানজেলেস’ নামে পরিচিত, শাসন পরিবর্তনের দাবিতে উত্তেজনা বাড়ছে। মুদি দোকান মালিক মোহাম্মদ গাফারি জানান, তিনি তার স্বজনদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হলেও নিজের জন্মভূমিতে বড় পরিবর্তনের আশা করছেন।
গাফারি বলেন, “ইরানের বর্তমান সরকার জনগণের খাদ্য জোগাতে পর্যন্ত অক্ষম। যদি শাসন পরিবর্তনে মানুষ খুশি হয়, আমিও খুশি হব।” তিনি ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আগে দেশ ছাড়েন এবং এরপর আর ফেরেননি।

গাফারির এক নারী ক্রেতা ফেরেশতে তার কথায় সম্মতি জানিয়ে বলেন, “হ্যাঁ, সবাই খুশি হবে।” ইরানি বংশোদ্ভূত এই ইহুদি নারী ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় দেশ ছেড়ে পালান। তিনি বলেন, “এখনই সময়। সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে। শুধু একটা ধাক্কা দরকার।”

অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা চায় আন্তর্জাতিক শক্তি
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো ইরানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্বলতা চায়। কারণ, এতে করে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখা এবং বিভিন্ন পদক্ষেপকে ‘নিরাপত্তার’ অজুহাতে জায়েজ করা সহজ হয়।

বিরোধী দলগুলোর সামনে সুযোগ
ইরানের বিভক্ত বিরোধী দলগুলো মনে করছে, খামেনির শাসনের পতনের সময় এখনই। যুদ্ধ চলাকালে তারা সরাসরি আন্দোলনে না নামলেও যুদ্ধবিরতির পর জোট গঠনের সম্ভাবনা বাড়ছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী দলগুলোর এই ঐক্য জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নিতে পারে।

রেজা পাহলভির নেতৃত্বে সম্ভাব্য পরিবর্তন?
ইরানের প্রয়াত শাহের পুত্র রেজা পাহলভি যুদ্ধের শুরুতে একাধিক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি রাজনৈতিক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। তার মতে, চার দশকে এই প্রথম ইসলামিক রিপাবলিককে উৎখাতের একটি বাস্তব সুযোগ এসেছে। তিনি একে ‘আমাদের মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যা দেন।

পাহলভি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনপুষ্ট। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে সরানো ছাড়া সমাধান নেই। তিনি রাজপথে আন্দোলন ও ধর্মঘটের পক্ষে, যা সরাসরি সরকারবিরোধী বিদ্রোহে রূপ নিতে পারে।

ইসরায়েলের লক্ষ্য শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন
ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন একটি কৌশলগত লক্ষ্য। যুদ্ধ শুরুর সময়ই প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই অভিপ্রায় স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন।

সার্বিকভাবে, যুদ্ধবিরতি ইঙ্গিত দিলেও ইরানের অভ্যন্তরে বড় ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলন, এমনকি শাসন পরিবর্তনের সম্ভাবনা এখন আরও বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে। আর এই বাস্তবতা খামেনির সামনে এক নতুন ও কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

No comments

Powered by Blogger.