বিএনপি ১৮০ দিনের অর্থনৈতিক কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণা করল

 

আগামীতে সরকার গঠন করলে প্রথম ১৮০ দিনে কী ধরনের অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হবে, তা প্রকাশ করেছে বিএনপি।

৪ জুন বুধবার, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই পরিকল্পনার সারাংশ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, জনগণের আস্থা অর্জন এবং একটি দৃঢ় ভবিষ্যৎ ভিত্তি গড়াই বিএনপির মূল লক্ষ্য। এজন্য দরকার হবে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।
তিনি আরও বলেন, সাহসী এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই সময়, যাতে জনগণের সামনে নতুন আশার দিগন্ত উন্মোচিত হয়।

---

১৮০ দিনের কর্মপরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য

বিএনপি বলছে, নির্বাচনের আগেই ১৮০ দিনের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। এই পরিকল্পনার ভিত্তিতে তৈরি হবে একটি অ্যাকশন-ওরিয়েন্টেড রোডম্যাপ।
মূল লক্ষ্য হলো:

• জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা

• স্বচ্ছতা বজায় রাখা

• দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য কার্যক্রম গ্রহণ করা

---

অগ্রাধিকার পাওয়া ১১টি খাত

বিএনপি যেসব খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তা হলো:

1. শিক্ষা

2. স্বাস্থ্যসেবা

3. নারীর ক্ষমতায়ন

4. শহীদদের স্বীকৃতি

5. কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন

6. শিল্পখাত

7. তথ্য প্রযুক্তি

8. প্রবাসী কল্যাণ

9. নগর ব্যবস্থাপনা

10. পরিবেশ

11. আইনশৃঙ্খলা

---

কর্মসংস্থানের অঙ্গীকার: এক কোটি মানুষের জন্য কাজ

বিএনপির প্রধান প্রতিশ্রুতি এক কোটি মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
পূর্ববর্তী সরকারের সময় যেমন শ্রমঘন শিল্প গড়ে তোলা হয়েছিল এবং শ্রমশক্তিকে বিদেশে পাঠিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছিল, এবারও সেই ধারাকে আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রস্তাবিত ১০টি খাত, যেগুলোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে:

• অবকাঠামোগত উন্নয়ন

• উৎপাদন শিল্প (ম্যানুফ্যাকচারিং)

• কৃষি

• বিদেশে শ্রম রপ্তানি

• আইসিটি ও ফ্রিল্যান্সিং

• সেবা খাত

• সবুজ জ্বালানি

• স্বাস্থ্য ও শিক্ষা

• ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প

• অন্যান্য উদ্ভাবনী খাত

---

শিক্ষায় রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ

• প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধি

• তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

• প্রবাসী ও দেশি শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি

• সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বল্পমেয়াদি ট্রেড কোর্স

• ইন্টার্নশিপ ও ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা বৃদ্ধি

• ইনোভেশন গ্র্যান্ট চালু করা হবে নতুন আইডিয়ার জন্য

---

স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব

• রোগ প্রতিরোধে টিকাদান, সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা

• চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ

• নিরাপদ পানির জন্য আধুনিক পরিশোধন পদ্ধতি

• বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে দেশব্যাপী রিসার্ভার তৈরি

---

ফ্যামিলি কার্ড: দরিদ্র পরিবারে সহায়তা

প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারে চালু করা হবে 'ফ্যামিলি কার্ড'।

• এই কার্ড পরিবারের নারী প্রধানের নামে ইস্যু করা হবে

• মাসিক আর্থিক সহায়তা বা খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে

---

নারীর ক্ষমতায়ন

• ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা

• ইউনিয়ন পর্যায়ে নারী সাপোর্ট সেল চালু

• নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ

---

শহীদদের স্বীকৃতি

• ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা তৈরি

• স্থানীয় স্থাপনার নামকরণ হবে শহীদদের নামে

• পঙ্গু ও আহতদের চাকরি ও আর্থিক সহায়তা

---

কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড

• ফার্মার্স কার্ডে জমির পরিমাণসহ তথ্য থাকবে

• উৎপাদিত পণ্য ন্যায্য মূল্যে কিনবে সরকার

• কোল্ড স্টোরেজ তৈরি

• কৃষিপণ্য রপ্তানিমুখী করা হবে

• ডাটাবেজ তৈরির মাধ্যমে টার্গেটেড পলিসি

• মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

---

আইসিটি ও প্রযুক্তি খাত

• ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রশিক্ষণ ও প্রোডাকশন সুবিধা

• ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের অফিস বাংলাদেশে আনতে উদ্যোগ

• পেপাল ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম চালুর উদ্যোগ

• জেলা পর্যায়ে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু

---

জিডিপির লক্ষ্য: ২০৩৪ সালে এক ট্রিলিয়ন ডলার

• এফডিআই-জিডিপি অনুপাত বাড়িয়ে ২.৫% করার লক্ষ্য

• করের বোঝা না বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির কৌশল

• ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করে বিনিয়োগ সহজতর করা

• বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু

---

নগর ব্যবস্থাপনা ও নিরাপদ যাতায়াত

• নারীদের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস, নারী ড্রাইভার ও সহকারীসহ

• ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞের সহায়তায় আধুনিক পরিকল্পনা

• এআই-ভিত্তিক ট্রাফিক লাইট ব্যবহারের পরিকল্পনা