ভারতের নতুন বিধিনিষেধ: বাংলাদেশের রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়বে?
বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। গত শুক্রবার (২৮ জুন) এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে এই বিধিনিষেধ জারি করে দেশটি। এরপর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। এটি ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পণ্যে তৃতীয় দফায় আরোপিত অশুল্ক বাধা। এতে করে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ৯টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে:
-
ফ্ল্যাক্স সুতার বর্জ্য
-
কাঁচা পাট
-
পাটের রোল
-
ফ্ল্যাক্স সুতা
-
পাটের সুতা
-
ফুড গ্রেড সুতা
-
লিনেন কাপড়
-
লিনেন ও তুলার মিশ্রণ কাপড়
-
কম প্রক্রিয়াজাত বোনা কাপড়
এই পণ্যগুলো মূলত পাট ও পাটজাত পণ্য—যা বাংলাদেশ রপ্তানিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।
স্থলপথে নিষেধাজ্ঞা, সমুদ্রপথ খোলা
যদিও স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ভারত এই ৯টি পণ্যের ক্ষেত্রে সমুদ্রপথে আমদানির সুযোগ রেখেছে। এসব পণ্য এখন কেবল মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের এসব পণ্যের মাত্র ১ শতাংশ রপ্তানি হয় সমুদ্রপথে। ফলে কার্যত সহজ ও স্বল্পমূল্যের স্থলপথের সুযোগটি বন্ধ হয়ে গেল।
রপ্তানির পরিমাণ ও ভারতের অবস্থান
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে এই ৯ ধরনের পণ্য বিশ্বের ৮৮টি দেশে রপ্তানি হয়েছে ৬৬ কোটি ডলারের। এর মধ্যে শুধু ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১৫ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট রপ্তানির প্রায় ২৩ শতাংশ। তুরস্কের পর ভারত এসব পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য।
২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে মোট রপ্তানি হয়েছে ১৫৯ কোটি ডলারের। নতুন এই নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন পণ্যের রপ্তানিই এর ৯ শতাংশ। আর ১৭ মে দেওয়া প্রথম দফার নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি ডলারের পণ্য, যা ভারতের মোট আমদানির প্রায় ৩১ শতাংশ। সব মিলিয়ে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে মোট রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ এখন নিষেধাজ্ঞার আওতায়।
ক্ষতিগ্রস্ত হবে ১১৭ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান
নতুন এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের ১১৭টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে নারায়ণগঞ্জের পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ। প্রতিষ্ঠানটি ভারতে ১ কোটি ১৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা তাদের মোট রপ্তানির অর্ধেক।
এছাড়া নরসিংদীর জনতা জুট মিলস দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তারা ১ কোটি ৩ লাখ ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি করেছে, যা তাদের মোট রপ্তানির ১৩ শতাংশ। এই প্রতিষ্ঠানটি আকিজ বশির গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
একাধিক রপ্তানিকারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাট খাতের রপ্তানিকারকরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিজেএসএর প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) সভাপতি তাপস প্রামাণিক বলেন, “ভারতের এমন সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক কারণেই নেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশের কাঁচা পাট, পাট সুতা ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে।” তিনি আরও জানান, এই প্রভাব বিশ্লেষণ করতে বিজেএসএ ৩০ জুন একটি জরুরি বৈঠক ডাকছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এবং সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হবে।
সমুদ্রপথে রপ্তানি কতটা বাস্তবসম্মত?
যদিও ভারত সমুদ্রপথে পণ্য আমদানির সুযোগ রেখেছে, তবে বিজেএসএ সভাপতি বলেন, “নভোসেবা বন্দরের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে পণ্য পৌঁছাতে হলে সময় ও খরচ দুই-ই বহুগুণে বাড়বে। এতে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা নষ্ট হবে।” তার মতে, ভারতের সঙ্গে দ্রুত কূটনৈতিক যোগাযোগ করে বিষয়টির সমাধান করা দরকার।
No comments