Header Ads

আরও কমলো জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের ব্যয়

 
       

      

আরও কমলো জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের ব্যয়

জমি ও ফ্ল্যাটের ক্রয়-বিক্রয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ কমাতে নিবন্ধন ব্যয় আরও এক দফা কমিয়েছে সরকার। এর ফলে এখন ঢাকা মহানগরে জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধনের মোট ব্যয় হবে সাড়ে ১২ শতাংশ। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার একটি সম্পদ নিবন্ধন করতে সাড়ে ১২ লাখ টাকা খরচ হবে।

গত রোববার (২২ জুন) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে জমির প্রকৃত বিক্রয়মূল্যে রেজিস্ট্রেশন উৎসাহ দিতে উৎসে কর কমানো হয়েছিল। চূড়ান্ত অনুমোদনে এ হার আরও কমিয়ে আনা হয়েছে।

তবে এবার ফ্ল্যাট বা ভবনে কালোটাকা বিনিয়োগ করে বৈধ করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। ২ জুনের প্রস্তাবিত বাজেটে এই সুযোগ রাখা হলেও, বাজেট অনুমোদনের সময় তা বাদ দেওয়া হয়।

বর্তমানে জমি বা সম্পত্তি হস্তান্তরে উৎসে কর ছিল—ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৮ শতাংশ, অন্যান্য সিটিতে ৬ শতাংশ এবং পৌরসভায় ৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে এগুলো যথাক্রমে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ করা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত বাজেটে তা আরও কমিয়ে যথাক্রমে ৫, ৩ ও ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

নিবন্ধন ব্যয়ে আরও যে উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

  • স্ট্যাম্প শুল্ক: ১.৫ শতাংশ

  • নিবন্ধন ফি: ১ শতাংশ

  • স্থানীয় সরকার ফি: ৩ শতাংশ

  • ভ্যাট: ২–৪.৫ শতাংশ

উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার গুলশানে ১,৬০০ বর্গফুটের কম আয়তনের একটি ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ এত দিন ছিল ১৫.৫ শতাংশ। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২.৫ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৩ সালে জমির শ্রেণি ভাগ করেছিল ক থেকে ঙ পর্যন্ত পাঁচটি শ্রেণিতে। এই শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী করহার নির্ধারণ করা হয়।

  • ক শ্রেণি: রাজউক, সিডিএ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যিক এলাকা

  • খ শ্রেণি: এই সব সংস্থার আবাসিক এলাকা

  • গ শ্রেণি: বেসরকারি ডেভেলপারদের বাণিজ্যিক এলাকা

  • ঘ শ্রেণি: গ শ্রেণির আবাসিক এলাকা

  • ঙ শ্রেণি: উপরের কোনোটির আওতায় নয়, বাকি সব জমি

ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও এলাকার জমিতে এত দিন দলিল অনুযায়ী ৮ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হতো। নতুন সিদ্ধান্তে এই হার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই হারে কর কমেছে ধানমন্ডি, রমনা, পল্টন, নিউমার্কেট, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও কলাবাগান এলাকায়ও। এছাড়া ঢাকার অন্যান্য মৌজাতেও করহার কমানো হয়েছে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ ছাড়া অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরে করহার ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। পৌরসভাগুলোতে করহার ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ক থেকে ঘ শ্রেণির ফ্ল্যাট বা বাণিজ্যিক স্পেসের জন্য প্রতি বর্গমিটারে ৮০০ টাকা অথবা দলিলে উল্লিখিত মূল্যের ৫ শতাংশ কর দিতে হবে (আগে ৮ শতাংশ ছিল)। ঙ শ্রেণির জন্য এই হার প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ টাকা বা ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেছেন, “নিবন্ধন ব্যয় ৩ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্তটি খুবই ইতিবাচক। এতে ফ্ল্যাট নিবন্ধন বাড়বে। তবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলছি, এই ব্যয় ৭–৮ শতাংশের মধ্যে আনতে হবে। ধাপে ধাপে এটা করলে আরও বেশি মানুষ তাঁদের ফ্ল্যাট বা জমি নিবন্ধন করবেন, এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.