পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান কেনায় চীনের প্রতিরক্ষা শিল্পে বড় উত্থান
চীন থেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কিনছে পাকিস্তান। এতে চীনের প্রতিরক্ষা শিল্পে ব্যাপক চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘোষণার পর দেশটির প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম চোখে পড়ার মতোভাবে বেড়ে গেছে।
সোমবার (৯ জুন) দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনে জানায়, পাকিস্তান চীনের উন্নত জে-৩৫ স্টিলথ ফাইটার জেট কেনার পরিকল্পনা নিশ্চিত করার পর চীনের প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর শেয়ারে এই ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, জে-৩৫ জেট নির্মাতা এভিআইসি শেনইয়াং এয়ারক্রাফট কোম্পানির শেয়ার সাংহাইয়ে লেনদেন চলাকালীন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে এয়ারোস্পেস নানহু ইলেকট্রনিক ইনফরমেশন টেকনোলজি কোম্পানির শেয়ার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাকিস্তানের সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জে-৩৫ কেনার পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করেছে। দেশটির কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানি পাইলটরা ইতিমধ্যে চীনে এই জেট চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এটি আসন্ন ডেলিভারির প্রস্তুতির অংশ।
জে-৩৫ যুদ্ধবিমানের ক্ষমতা
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্র্যান্ডন জে. ওয়েইচার্ট জানিয়েছেন, চীনের পঞ্চম প্রজন্মের জে-৩৫এ ফাইটার জেট শিগগিরই পাকিস্তানে সরবরাহ করা হবে। এই যুদ্ধবিমান স্টিলথ প্রযুক্তি, উন্নত সেন্সর এবং গভীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা নিয়ে তৈরি, যা পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অনেক শক্তিশালী করে তুলবে।
চীনের শেনইয়াং এয়ারক্রাফ্ট কর্পোরেশন নির্মিত জে-৩৫এ হলো দেশটির দ্বিতীয় পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। এটি আগের মডেল চেংদু জে-২০-এর পর সবচেয়ে উন্নত ফাইটার জেট হিসেবে বিবেচিত।
জে-৩৫এ ফাইটার জেটে রয়েছে:
-
অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিকালি স্ক্যানড অ্যারে (AESA) রাডার
-
ইলেকট্রো-অপটিক্যাল টার্গেটিং সিস্টেম
-
উন্নত অ্যাভিওনিক্স, যা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা এবং লক্ষ্য নির্ধারণে নিখুঁততা বৃদ্ধি করে
স্টিলথ ডিজাইনের কারণে বিমানটি রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম। এর ফলে রাডার ক্রস-সেকশন (RCS) হ্রাস পায়, যা শত্রুর নজর এড়াতে সহায়ক।
এছাড়া, জে-৩৫এ বিমানটি দীর্ঘপাল্লার PL-15 এবং PL-17 এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বহনে সক্ষম, যা দৃষ্টিসীমার বাইরের যুদ্ধ (Beyond-Visual-Range Combat) পরিচালনায় বড় সুবিধা দেয়।
গতি এবং ইঞ্জিন ক্ষমতা
জে-৩৫এ-তে রয়েছে:
-
রাশিয়ান RD-93 অথবা চীনা WS-19 টার্বোফ্যান ইঞ্জিন
-
সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় প্রায় ১,৩৬৭ মাইল
চীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাকিস্তানি পাইলটরা আগামী আগস্ট থেকেই এই যুদ্ধবিমানের প্রথম চালান গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।
কৌশলগত গুরুত্ব
এই জে-৩৫ যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের পুরনো এফ-১৬ ও মিরাজ বহর প্রতিস্থাপন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্র্যান্ডন ওয়েইচার্ট মনে করেন, জে-৩৫এ পাকিস্তানকে ভারতের আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মোকাবিলা করতে সহায়তা করবে।
এছাড়া, এটি দীর্ঘপাল্লার আক্রমণ মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ভারসাম্যে একটি বড় পরিবর্তন এনে দিতে পারে।
No comments