যে ৮ ব্যাংকে মে মাসে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি

 

মে মাসজুড়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো থাকলেও দেশের ৮টি ব্যাংকে এক টাকাও রেমিট্যান্স আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে যে ৮টি ব্যাংকে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি, তার মধ্যে রয়েছে ১টি বিশেষায়িত ব্যাংক, ৪টি বেসরকারি ব্যাংক এবং ৩টি বিদেশি ব্যাংক।

এই ব্যাংকগুলো হলো:

• বিশেষায়িত ব্যাংক: রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)

• বেসরকারি ব্যাংক: কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, সিটিজেন্স ব্যাংক পিএলসি, পদ্মা ব্যাংক পিএলসি এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংক

• বিদেশি ব্যাংক: হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া

অথচ পুরো মে মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রায় ২৯৭ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, অর্থাৎ ১ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, বর্তমানে হুন্ডি বা অবৈধ চ্যানেলের দৌরাত্ম্য কমে এসেছে। পাশাপাশি বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমেই টাকা পাঠাচ্ছেন।

সরকারও অর্থপাচার রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার অর্থপাচার ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যসহ ১১টি ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি সংযুক্ত করা হয়েছে।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির প্রভাব হিসেবে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জুলাই থেকে মে পর্যন্ত দেশে এসেছে ২,৭৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি।

রেমিট্যান্স উৎস অনুযায়ী মে মাসে:

• রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে: ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার

• বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে কৃষি ব্যাংক পেয়েছে: ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি

• বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে: ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার

• বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে: মাত্র ৪১ লাখ ৩০ হাজার ডলার

এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা ফেব্রুয়ারি-মার্চ-এপ্রিল মাসেও দেখা গেছে। মার্চে দেশে এসেছিল সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ছিল ২৭৫ কোটি ডলার।

তবে মে মাসে রেমিট্যান্সে এই অভাবনীয় প্রবাহের মধ্যেও ৮টি ব্যাংকে শূন্য রেমিট্যান্স কেন, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

রেমিট্যান্স একটি দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ফলে এসব ব্যাংকের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের দাবি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।