লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতি নিয়ে কয়েকটি দলের আপত্তি
গত শুক্রবার লন্ডনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়া এ রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ প্রেস ব্রিফিং ও যৌথ বিবৃতিকে কেন্দ্র করে বেশকিছু রাজনৈতিক দল অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এ ধরনের যৌথ বিবৃতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন এবং প্রশ্নবিদ্ধ।
নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ
বিশেষত জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ বেশ কয়েকটি দল মনে করে, একটি মাত্র দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে এভাবে যৌথ বিবৃতি প্রদান অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার ওপর প্রশ্ন তুলে দেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকট কিছুটা প্রশমিত হলেও প্রকৃত সংকট এখনো কাটেনি বরং সামনে আরও রাজনৈতিক মেরুকরণ জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য
বিভিন্ন দল থেকে উঠে আসা প্রতিক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে, তারা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে আপত্তি তুলছে না, বরং সমালোচনা করছে কেবল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক ও যৌথ বিবৃতি প্রদানের পদ্ধতি নিয়ে। তারা মনে করে, এটি প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি রাষ্ট্রীয় পক্ষপাতিত্বের বার্তা দেয়।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক্রিয়া
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ৬ জুন দেওয়া ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। এর এক সপ্তাহ পর একটি দলের সঙ্গে বিদেশে যৌথ বিবৃতি দেওয়া রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন। তাদের মতে, দেশে ফিরে এসে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন অবস্থান জানানো উচিত ছিল।
ইসলামী আন্দোলনের পর্যবেক্ষণ
চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বৈঠককে ইতিবাচক বললেও যৌথ বিবৃতির ভাষা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। দলটির মুখপাত্র বলেন, ড. ইউনূস দেশের সরকারপ্রধান, আর তারেক রহমান একটি দলের নেতা—তাদের বৈঠক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যৌথ বিবৃতি আকারে প্রকাশ করা সমীচীন নয়।
এনসিপির হতাশা
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা গুরুত্ব পেলেও কাঙ্ক্ষিত বিচার ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি, যা হতাশাজনক। তারা মনে করে, নির্বাচনের আগে ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবিকে উপেক্ষা করে কেবল তারিখ ঘোষণায় জনগণের আস্থা তৈরি হবে না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অভিমত
খেলাফত মজলিসের নেতারা যৌথ বিবৃতিকে সমর্থনযোগ্য বললেও ড. ইউনূসের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ও সব দলের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে অন্তর্বর্তী সরকার আরও সতর্ক হবে।
বিএনপির জবাব
জামায়াতের প্রতিক্রিয়ার জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রোজা, আবহাওয়া ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাওয়ার পক্ষে অধিকাংশ দলেরই মত ছিল। এমনকি জামায়াতের আমিরও একই সময়ে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন। তাই এটি কোনো একক দলের সুবিধা নয়।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, এই বৈঠক জনমনে আশাবাদ জাগিয়েছে। যেহেতু দুই পক্ষই পূর্বঘোষিত সময়সীমা থেকে সরে এসে আপসহীন অবস্থান পরিবর্তন করেছে, এটি রাজনৈতিক সমঝোতার ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে তিনি উল্লেখ করেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি।
No comments