সৌদি আরব এবার হজে কী চমক রাখছে
চরম গরমের মধ্যেও এক মিলিয়নেরও বেশি হজযাত্রীকে স্বাগত জানাতে জোর প্রস্তুতি নিয়েছে সৌদি আরব। হজ মৌসুমে প্রচণ্ড তাপদাহ থেকে হজযাত্রীদের রক্ষা করতে এবার আধুনিক প্রযুক্তি ও নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), বাড়তি ছায়ার ব্যবস্থা এবং শক্তিশালী ঠান্ডা করার যন্ত্র।
সৌদি আরবের হজবিষয়ক মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মরুভূমির প্রচণ্ড গরম হজযাত্রীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর তাই এই গরম মোকাবিলাই এবার তাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, “প্রতিবছর তাপমাত্রা বাড়ছে। ২০২৪ সালে তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। তখন ১,৩০০-র বেশি হজযাত্রী মারা যান। এবার যেন তেমন কিছু না ঘটে, সেজন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।”
প্রচণ্ড গরমে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা
হজ মৌসুমে গরম কমাতে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী। ৪০টিরও বেশি সরকারি সংস্থা এবং ২.৫ লাখ কর্মী হজ ব্যবস্থাপনায় অংশ নেবেন। মক্কা ও মিনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ছায়াযুক্ত এলাকা ৫০ হাজার বর্গমিটার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং ৪০০টিরও বেশি কুলিং ইউনিট বসানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও নেওয়া হয়েছে বিশাল প্রস্তুতি। হাজার হাজার চিকিৎসাকর্মী মোতায়েন থাকবেন যেন হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যায়।
রাস্তা ঠান্ডা রাখার বিশেষ আস্তরণ
পুরনো উদ্যোগগুলোর পাশাপাশি এবার নতুন ব্যবস্থাও যোগ হয়েছে। মসজিদুল হারামের চারপাশে উন্নয়ন করা হয়েছে এবং রাস্তাগুলোতে বিশেষ ধরনের আস্তরণ দেওয়া হয়েছে, যা সূর্যের তাপে রাস্তা গরম না হয়ে ঠান্ডা থাকে।
মন্ত্রী জানান, এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এখনও অনেক হজযাত্রী আসছেন।
২০২৪ সালে মোট ১৮ লাখ মুসল্লি হজে অংশ নিয়েছিলেন।
ভিড় নিয়ন্ত্রণে এআই ও কড়াকড়ি ব্যবস্থা
ভিড় নিয়ন্ত্রণে এবার ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নতমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সফটওয়্যার। ড্রোন ফুটেজসহ বিভিন্ন ভিডিও বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিক তথ্য বিশ্লেষণ করবে এ প্রযুক্তি। এই সিস্টেমের মাধ্যমে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
২০১৫ সালে হজে পদদলিত হয়ে প্রায় ২৩০০ জন মারা যাওয়ার ঘটনায় সৌদি সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় আরও সচেতন হয়েছে। এবার অনুমতি ছাড়া কেউ যাতে হজে অংশ নিতে না পারে, সে জন্য কঠোর নজরদারি ও অভিযান চালানো হচ্ছে।
ভুয়া হজযাত্রীদের জন্য শাস্তি
২০২৪ সালের হজে যেসব হজযাত্রী মারা গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরই হজের অনুমতি ছিল না। তাই তারা প্রয়োজনীয় সুবিধা পাননি। এবার অনুমতি ছাড়া কেউ হজ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের গ্রেপ্তার, নির্বাসন এবং ১০ বছরের জন্য সৌদি আরব প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে।
এছাড়া হজের নিয়ম ভাঙলে আর্থিক জরিমানাও বাড়ানো হয়েছে এবং গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মন্ত্রী রাবিয়াহ বলেন, “অনুমতি ছাড়া হজে অংশ নেওয়া শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও বিপজ্জনক। তাই সবাইকে অনুরোধ করছি, অনুমতি নিয়েই হজ পালন করুন।”
৪ জুন শুরু হবে ২০২৫ সালের হজ
২০২৫ সালের হজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ৪ জুন এবং এটি চলবে অন্তত চার দিন। হজ হচ্ছে ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম। এটি শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রতিটি মুসলমানের জন্য জীবনে একবার পালন করা ফরজ।
মন্ত্রী রাবিয়াহ আরও বলেন, “হজ শুধু একটি ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, এটি সৌদি আরবের জন্য একটি গর্বের বিষয়। হজযাত্রীদের নিরাপত্তা, আরাম ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব।”
সার্বিকভাবে, এবারের হজে সৌদি সরকার সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ ব্যবহার করে ইতিহাসের অন্যতম নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়।
No comments