গাজায় মৃত্যুর ছায়া, ক্ষুধায় কাতর নিষ্পাপ প্রাণ
গাজায় প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু, হারিয়ে যাচ্ছে শিশুরা। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ছে শুধু ভবন নয়, হারিয়ে যাচ্ছে মানবতা। সম্প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় খান ইউনুসে হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা ঘটেছে—চিকিৎসক ড. আলা আল-নাজ্জারের ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জনই প্রাণ হারিয়েছেন। আর ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রণায় মারা গেছে মাত্র চার বছর বয়সী শিশু মোহাম্মদ ইয়াসিন। এই মর্মান্তিক খবর জানিয়েছে আলজাজিরা।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, গাজায় বর্তমানে ৭০ হাজারেরও বেশি শিশু ভয়ংকর অপুষ্টিতে ভুগছে। খাবারের অভাবে প্রতিদিনই নতুন করে মৃত্যু ঘটছে। মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না।
জাতিসংঘ মহাসচিব জানিয়েছেন, ইসরায়েল এখনও গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। বুধবার থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০০টি সহায়তা ট্রাক প্রবেশ করেছে, যা দুই লাখ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৯০১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৫৯৩ জন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি—৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। কারণ, বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাষায়, গাজা এখন শিশুদের জন্য এক ভয়ংকর "মৃত্যুকূপ" হয়ে উঠেছে। খাদ্য, চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা—সবকিছুরই অভাব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা 'সেভ দ্য চিলড্রেন' জানিয়েছে, এমন ভয়াবহ মানবিক অবস্থা সাম্প্রতিক ইতিহাসে আর দেখা যায়নি।
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ড. আলা আল-নাজ্জারের পরিবারের ওপর হামলার ঘটনাটি তারা তদন্ত করছে। তবে গাজার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, শিশু হত্যা এখন যেন ইসরায়েলি বাহিনীর ‘নতুন স্বভাব’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বের বহু দেশের নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তায় আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিরীহ শিশু ও নারী।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্ব বিবেকের সামনে বড় একটি প্রশ্ন তুলে ধরছে—কবে থামবে এই রক্তপাত? কবে শান্তিতে ফিরবে শিশুদের শৈশব?
No comments