পানি নিয়ে পাক-ভারত উত্তেজনা: জাতিসংঘে ভারতের বিরুদ্ধে সরব পাকিস্তান

 

সীমান্তে টানা উত্তেজনা ও সংঘর্ষের পর আপাতত কিছুটা শান্ত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক। সামরিক পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ ও যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বাড়ানোর ফলে কিছুটা স্থিতি ফিরেছে। তবে নতুন করে উত্তেজনার আগুন ছড়িয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি ঘিরে।

ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান

ভারত সম্প্রতি একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তানের মতে, এটি শুধু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নয়, বরং কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর হুমকি। ভারতের এই পদক্ষেপ নিয়ে এখন আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা শুরু হয়েছে।

জাতিসংঘে তীব্র প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানের

গত শুক্রবার (২৩ মে) জাতিসংঘে “সশস্ত্র সংঘাতে পানিসম্পদ সুরক্ষা” শীর্ষক এক বৈঠকে পাকিস্তান বিষয়টি উত্থাপন করে।
সেখানে জাতিসংঘে পাকিস্তানের ডেপুটি স্থায়ী প্রতিনিধি উসমান জাদুন ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় কথা বলেন।

তিনি বলেন,

“ভারতের এই একতরফা সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার আইন এবং চুক্তির আইন লঙ্ঘন করে। পাকিস্তান এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। আমরা জোর দাবি করছি—ভারত যেন অবিলম্বে সিন্ধু পানি চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে কোনো বাধা না দেয়।”

ভারতের রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে উদ্বেগ

উসমান জাদুন ভারতের কিছু রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিশেষ করে “পাকিস্তানিদের না খাইয়ে মারার” মতো বক্তব্যকে তিনি বিকৃত মানসিকতার পরিচায়ক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন।

পানি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান

পাকিস্তান জাতিসংঘের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছে,

“কোনো দেশ যেন পানিকে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। পানি কোনো দেশকে শাস্তি দেওয়ার মাধ্যম নয়—এটি জীবন।”

পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদকেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার আহ্বান জানায়।
উসমান বলেন,

“যে কোনো পরিস্থিতি যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে, সেটি নিরাপত্তা পরিষদের নজরে থাকা উচিত।”

পাকিস্তানের তিনটি মূল বক্তব্য:

১. পানি সম্পদে আক্রমণ বা বাধা মানবাধিকার ও মানবিক আইনের পরিপন্থী।
২. পানিকে কখনোই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
৩. এটি আঞ্চলিক অস্থিরতা ও মানবিক বিপর্যয় তৈরি করতে পারে।

সিন্ধু নদ: পাকিস্তানের জীবনরেখা

পাকিস্তানের মতে, সিন্ধু নদ শুধু একটি নদী নয়—এটি দেশের জন্য জীবনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
নদীর প্রবাহ রোধ বা তা ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন করে তুলতে পারে।
এই অবস্থায় পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন আন্তর্জাতিক মহলের কড়া নজরে রয়েছে।
পানি নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের এই নতুন দ্বন্দ্ব দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।