Header Ads

গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা কে নিশ্চিত করবে?


চারটি বিসিএসের জট কাটিয়ে এক বছরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে চায় পিএসসি



বাংলাদেশে সমবায় সমিতির নামে প্রতারণার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে কিছু লোক অল্প সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে উঠলেও, বিপরীতে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন। অথচ এসব প্রতারণা ঠেকাতে সমবায় অধিদপ্তরের তেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।

সমবায় সমিতির মূল উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, তাদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে, এই সমিতিগুলোই এখন তাঁদের জন্য দুর্ভোগ আর হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে মানুষ ক্রমেই আস্থা হারাচ্ছে সমবায় ব্যবস্থার প্রতি।

সম্প্রতি প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় হাজার হাজার গ্রাহক তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা লাঠি, ঝাড়ু নিয়ে মিছিল করে থানা ঘেরাও করেন, এমনকি জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়কও অবরোধ করেন। এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে এক নারী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সমিতিতে জমা রাখা টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা—একটি গৃহস্থ পরিবারের জন্য যা অত্যন্ত মূল্যবান।

এই উপজেলার ২৩টি সমবায় সমিতি প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের কাছ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি সংগ্রহ করে গত দুই বছর ধরে গা ঢাকা দিয়েছে। জমা রাখা এই অর্থের বেশির ভাগই ছিল স্কুলশিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, গৃহকর্মী ও রিকশাচালকদের কষ্টার্জিত সঞ্চয়। অনেকে সংসার চালিয়ে বাঁচানো অর্থ জমা রেখেছিলেন ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার আশায়। এখন সেই অর্থ ফেরত পাওয়ারও কোনো গ্যারান্টি নেই।

সমবায় আইন অনুযায়ী, সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কাউকে কোনো প্রকার প্রলোভন দেখানো যাবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেক সমিতি সাধারণ মানুষকে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও অনৈতিক।

এ ধরনের প্রতারণা কেবল জামালপুরেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। অনেক মানুষ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে ঋণ না পেয়ে সমবায় সমিতির দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু এই সমিতিগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি তাঁদের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হলো—এত টাকা আত্মসাতের দায়ভার কে নেবে? গ্রাহকের টাকা রক্ষার দায়িত্ব কি শুধু তাঁর নিজের? নাকি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও কোনো দায়িত্ব আছে?

আমরা মনে করি, সমবায় অধিদপ্তরকে এ ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে। সমবায় সমিতির নিবন্ধনের সময় যথাযথ যাচাই-বাছাই করতে হবে। নিবন্ধনের পর সমিতিগুলোর কার্যক্রম তদারক করার জন্য নিয়মিত অডিট ও পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

এছাড়া যাঁরা সমিতি পরিচালনা করেন, তাঁদের আর্থিক অবস্থান, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অতীত রেকর্ড বিবেচনায় নিয়ে নিবন্ধন দেওয়া উচিত। কোনো সদস্যের অর্থ আত্মসাৎ হলে পরিচালকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো—একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা নিরাপদ থাকে। নইলে দেশের মানুষ সমবায়ের ওপর আস্থা হারাবে, আর সেই সঙ্গে হারাবে উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

তাই এখনই সময়—প্রশ্নটা জোরে উচ্চারণ করার: গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে কে? সরকার ও সমবায় অধিদপ্তর কি এই দায়িত্ব নেবে, নাকি মানুষকে আরও অনেক প্রতারণার শিকার হতে হবে?

No comments

Powered by Blogger.