বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ২৫ বিলিয়ন ডলার ফেরত আসছে
বাংলাদেশ ব্যাংক পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তারা ১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন, যাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি পরিবারই প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে, যা একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের মোট আমানতের ৯০%। ফলে সেই ব্যাংকটি দেউলিয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
পাচার হওয়া অর্থ কোথায় আছে?
তদন্তে দেখা গেছে, পাচারকৃত অর্থের একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে জমা রয়েছে। বিশেষ করে লন্ডনে বাংলাদেশি প্রভাবশালীদের বিশাল সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে। এসব অর্থ দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকার ব্রিটিশ প্রশাসন, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট এবং আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
আল জাজিরার আগের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে লন্ডন ও দুবাইতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পত্তি রয়েছে। শুধু লন্ডনেই তাদের ৩৬০টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে তার ৪০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে সাইফুজ্জামান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা এবং তার সম্পদ বৈধভাবে অর্জিত।
সহযোগীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা
গভর্নর আহসান মনসুর জানিয়েছেন, শুধু পাচারকারীদের নয়, বরং তাদের সহায়তা করা আইনজীবী, ব্যাংকার ও রিয়েল এস্টেট এজেন্টদেরও তদন্তের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, "অপরাধীদের সহায়তাকারীদেরও শাস্তির আওতায় আনা নৈতিক দায়িত্ব।"
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসন পরিবর্তনের পর এই তদন্তে কিছু বাধা সৃষ্টি হয়েছে। ইউএসএআইডি’র তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে মার্কিন তদন্ত সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, যা গভর্নরের মতে, "দুর্ভাগ্যজনক"।
বাংলাদেশ ব্যাংক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি, দরকষাকষি ও সাধারণ ক্ষমার বিষয়টিও বিবেচনা করছে যাতে তারা দেশে অর্থ ফেরত আনতে আগ্রহী হয়। তবে সম্পূর্ণ অর্থ উদ্ধার করতে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
এই উদ্যোগ সফল হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে। তবে আইনি জটিলতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ঘাটতির কারণে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া হতে পারে। তবুও, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রচেষ্টা দেশটির আর্থিক স্থিতিশীলতায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
No comments