Header Ads

দরিদ্র শিশুরা কি ফিতরা পাওয়ার যোগ্য?

 

দরিদ্র শিশুরা কি ফিতরা পাওয়ার যোগ্য?



দরিদ্র শিশুদের ফিতরা দেওয়া যাবে কি না, তা নির্ভর করে তাদের অভিভাবকের আর্থিক অবস্থার ওপর। যদি কোনো শিশুর বাবা স্বচ্ছল হন, তবে সে শিশু দরিদ্র হিসেবে গণ্য হবে না এবং তাকে ফিতরা দেওয়া যাবে না। তবে যদি শিশুর পরিবার প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র হয়, তাহলে তাকে ফিতরা দেওয়া যেতে পারে।

তবে শিশুর হাতে সরাসরি ফিতরার টাকা দেওয়া উচিত নয়, কারণ তারা তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারে না। এজন্য ফিতরার টাকা তার বাবা বা অভিভাবকের হাতে দেওয়া উত্তম। যদি শিশুর হাতে দেওয়া হয়, তাহলে নিশ্চিত করতে হবে যে সে তা তার অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে এবং এটি অপচয় বা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।

ফিতরা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ত করা জরুরি, তবে গ্রহণকারীর পক্ষে জানা বাধ্যতামূলক নয় যে, তাকে ফিতরা দেওয়া হচ্ছে। তাই ঈদ সালামি, উপহার, বখশিশ বা অন্য কোনো নাম দিয়েও ফিতরা দেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে এই দান পৌঁছে দেওয়া যায়।

যেসব ব্যক্তি জাকাত গ্রহণের যোগ্য, তারাই ফিতরাও নিতে পারেন। অর্থাৎ, যাদের কাছে জাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, তারা ফিতরা গ্রহণ করতে পারবেন। ঋণগ্রস্ত, ভিক্ষুক বা সাধারণ গরিবদেরও ফিতরা দেওয়া যায়।

তবে নিজের বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, সন্তান বা নাতি-নাতনিদের ফিতরা দেওয়া বৈধ নয়। কারণ, তাদের ভরণপোষণ করা নিজের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তবে দরিদ্র ভাই-বোন, চাচা-চাচি, মামা-মামি, ফুফা-ফুফুসহ অন্যান্য আত্মীয়দের ফিতরা দেওয়া যায়, যদি তারা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হন।

আত্মীয়দের মধ্যে দরিদ্র কেউ থাকলে তাদের ফিতরা দেওয়া সবচেয়ে উত্তম। এতে ফিতরা প্রদান ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, সাধারণ দরিদ্রদের সদকা দিলে তা সদকা হিসেবে গণ্য হয়, আর আত্মীয়দের দিলে তা সদকা হওয়ার পাশাপাশি আত্মীয়তার হকও আদায় হয়।

যাদের ওপর ফিতরা ওয়াজিব

ঈদুল ফিতরের দিন সকালে যে ব্যক্তি জাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তার ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে বোঝায় – সাড়ে সাত ভরি সোনা, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা এর সমমূল্যের নগদ অর্থ, ব্যবসার মাল, বসবাসের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি, বাড়ি বা অপ্রয়োজনীয় সম্পদ।

যে ব্যক্তি জাকাত দেওয়ার যোগ্য, তার ওপর ফিতরাও ওয়াজিব। তবে কিছু মানুষের ওপর ফিতরা ওয়াজিব হলেও জাকাত ওয়াজিব নাও হতে পারে। কারণ, ফিতরার নিসাব নির্ধারণে অতিরিক্ত সম্পত্তি যেমন – সৌখিন আসবাবপত্র, খালি পড়ে থাকা বা ভাড়া দেওয়া জমিজমা ও বাড়িঘরকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়, যা জাকাতের ক্ষেত্রে ধরা হয় না।

হাদিস অনুযায়ী, রাসুল (সা.) পাঁচ ধরনের খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায়ের অনুমতি দিয়েছেন – উন্নত মানের খেজুর, মধ্যম মানের খেজুর, কিসমিস, পনির ও গম। এসব খাদ্যের মূল্য অনুযায়ী ফিতরার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত হয়।

২০২৫ সালে (১৪৪৬ হিজরি) বাংলাদেশে ফিতরার পরিমাণ জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২,৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.