Header Ads

লাইলাতুল কদর: এক মহিমান্বিত রাত


লাইলাতুল কদর এক মহিমান্বিত রাত


লাইলাতুল কদর ইসলামের এক অন্যতম পবিত্র এবং বরকতময় রাত। এই রাতের কারণে মাহে রমজান আরও বেশি মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

কুরআনে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “রমজান হলো সে মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে।” (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)। এই কদরের রাতেই সর্বপ্রথম কুরআন নাজিল করা হয়। সুরা কদরের শুরুতেই মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল করেছি কদরের রাতে।”

লাইলাতুল কদরের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও বেশি। আল্লাহ বলেন, “লাইলাতুল কদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর”, অর্থাৎ এই রাত এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তাই এই রাতের ইবাদত করার মাধ্যমে এক হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াব লাভ করা সম্ভব।

কদরের রাতের মাহাত্ম্য

রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের এক ইসরাইলি আবেদের গল্প শুনিয়েছিলেন, যিনি এক হাজার মাস রাতভর ইবাদত করতেন এবং দিনে জিহাদ করতেন। সাহাবিরা এতে বিস্মিত হলে, আল্লাহ সুরা কদর নাজিল করেন, যাতে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য এক রাতের ইবাদতকে এক হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ঘোষণা করা হয়।

কদরের অর্থ ও ব্যাখ্যা

"লাইলাতুল কদর" একটি আরবি শব্দ। "লাইল" অর্থ রাত এবং "কদর" অর্থ মর্যাদা, ভাগ্য নির্ধারণ, সম্মান ইত্যাদি। তাই এটি মহিমান্বিত ও ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবে পরিচিত। কুরআনে বলা হয়েছে, “এই বরকতময় রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।” (সুরা দুখান, আয়াত ৪)।

ভাগ্য নির্ধারণের রাত

অনেকে লাইলাতুল কদরকে ভাগ্য নির্ধারণের রাত বলেন, তবে হাদিস থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমিন সৃষ্টির বহু আগেই সকল সৃষ্টির ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন। তবে প্রতি বছর এই রাতে ফেরেশতাদের হাতে মানুষের পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য সম্পর্কে নির্দেশ অর্পণ করা হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আমল

লাইলাতুল কদরের মাহাত্ম্যের কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশ রাতে ইবাদতে আরও বেশি সময় ব্যয় করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, “যখন রমজানের শেষ দশ দিন আসত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইবাদতে আরও মনোযোগী হয়ে যেতেন, রাত জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।” (বুখারি-মুসলিম)

কদরের রাত কোনটি?

সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর কোন রাতে ঘটে তা নিশ্চিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রমজানের শেষ দশ দিনে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।” (বুখারি-মুসলিম)

কেন কদরের রাত নির্দিষ্ট করা হয়নি?

রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথমে নির্দিষ্টভাবে কদরের রাত দেখতে পেলেও পরে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়। এটি মহান আল্লাহর এক কৌশল, যাতে মানুষ শুধু এক রাতেই ইবাদত না করে বরং শেষ দশ দিনে ইবাদতে মগ্ন থাকে। অধিকাংশ ইসলামী স্কলারদের মতে, এটি রমজানের শেষ দশকের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখের রাতে হতে পারে।

লাইলাতুল কদর এক মহিমান্বিত ও বরকতময় রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এটি আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ, যা আমাদের অধিক সওয়াব অর্জনের সুযোগ করে দেয়। তাই এই রাতের ইবাদতকে গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহর রহমত লাভের চেষ্টা করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.