প্রতিদিন দুটি খেজুর খেলে মিলবে অসংখ্য উপকার
খেজুর শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু ফলই নয়, এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সুপারফুডও। আমাদের দেশে রোজার সময় ইফতারে খেজুর খাওয়ার প্রচলন থাকলেও সারা বছর এটি খাওয়ার অভ্যাস অনেকের নেই। অথচ প্রতিদিন মাত্র দুটি খেজুর খেলে শরীরে অসংখ্য উপকার পাওয়া সম্ভব।
খেজুর প্রাকৃতিকভাবে শক্তির উৎস এবং এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, খনিজ ও উদ্ভিদ হরমোন। নিয়মিত খেজুর খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হাড় শক্তিশালী হয়, হজমক্ষমতা উন্নত হয় এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য নিষ্কাশিত হয়।
এছাড়া, অনেকেই মনে করেন যে খেজুর খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। তবে গবেষণা বলছে, এটি বরং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক কেন প্রতিদিন দুটি খেজুর খাওয়া দরকার এবং এটি কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
১. হজমশক্তি উন্নত করে ও ক্ষতিকর বর্জ্য দূর করে
খেজুরে উচ্চমাত্রার দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় আঁশ (ফাইবার) রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন দুটি খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে এবং মল নরম হয়। এর ফলে সহজে মলত্যাগ সম্ভব হয়, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
এছাড়া, খেজুরের আঁশ শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং হজমতন্ত্র পরিষ্কার রাখে। তাই যারা নিয়মিত পেটের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তারা প্রতিদিন খেজুর খেলে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল কোষ ধ্বংস করে এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ হতে পারে।
খেজুরে তিন ধরনের প্রধান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে:
- ফ্ল্যাভোনয়েড: এটি ডায়াবেটিস, আলঝেইমারস ও কিছু ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- ক্যারোটিনয়েড: এটি চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং বয়সজনিত চোখের রোগ প্রতিরোধ করে।
- ফেনোলিক অ্যাসিড: এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
অনেকেই মনে করেন, খেজুরের মিষ্টি স্বাদ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১৬ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তিনটি করে খেজুর খাওয়ার পর তাঁদের রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমে এবং ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া, খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না। তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও নির্দ্বিধায় এটি খেতে পারেন।
৪. হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
খেজুরে প্রচুর খনিজ উপাদান রয়েছে, যার মধ্যে কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং সেলেনিয়াম অন্যতম। এই উপাদানগুলো হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং অস্টিওপরোসিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
বিশেষত বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি হাড় মজবুত রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৫. ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত ও উজ্জ্বল রাখে
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইটো হরমোন (উদ্ভিদ হরমোন) থাকে, যা বলিরেখা প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুরের বিচির নির্যাস দিয়ে তৈরি লোশন ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালো দাগ কমে যায় এবং ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়।
৬. দ্রুত শক্তি প্রদান করে
খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ) থাকে, যা তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। এটি বিশেষ করে খেলোয়াড়দের জন্য উপযুক্ত, কারণ এটি দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে এনে ক্লান্তি দূর করে।
৭. হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়
খেজুরে পটাসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ উপাদান থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া, এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদ্যন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং ধমনীতে জমে থাকা চর্বি কমাতে সহায়ক।
উপসংহার
প্রতিদিন মাত্র দুটি খেজুর খেলে আপনি পাবেন অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, হাড় ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়।
তাই সুস্থ থাকতে আজ থেকেই খাদ্যতালিকায় খেজুর যোগ করুন এবং এর অনন্য পুষ্টিগুণের পুরোপুরি উপকারিতা নিন!
No comments