পরিশুদ্ধ’ আওয়ামী লীগ নিয়ে আলোচনা, তবে দলে আগ্রহ নেই
বর্তমানে ‘রিফাইন্ড’ বা ‘পরিশুদ্ধ’ আওয়ামী লীগের ধারণা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা চলছে। তবে দলটির অভ্যন্তরে এ বিষয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার কোনো পরিকল্পনার বিষয়েও দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা কোনো তথ্য দেননি। এমনকি দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দও এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। ফলে এই ধারণার বাস্তবসম্মততা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের অবস্থান
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। তাঁর সঙ্গে অনেক শীর্ষ নেতাও দেশত্যাগ করেন। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। কিছু মহলে ধারণা করা হচ্ছিল, দলটির নেতৃত্ব নিজেদের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে আত্মসমালোচনা করবে। তবে বাস্তবে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেদের ভুল স্বীকার না করে বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ও জুলাই আন্দোলনের নেতাদের সমালোচনায় মনোযোগ দিয়েছে।
পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত?
আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ কারা করবে এবং কিভাবে করবে, সেটাই বড় প্রশ্ন। বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা কি নিজে পদত্যাগ করে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবেন, নাকি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাদ দিয়ে দল পুনর্গঠন করবেন—এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে কিছু নেতার ধারণা, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে দলের ভেতর থেকে কেউ উদ্যোগ নিলে দল পুনর্গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। কিন্তু এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাড়া কেমন হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
পরিকল্পনায় কারা রয়েছেন?
জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে, যা মূলত ভারতের পরিকল্পিত। এতে সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রাখা হচ্ছে। হাসনাত আবদুল্লাহর দাবি, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিরোধী দলগুলোকেও আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া
আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘কোনো রিফাইন্ড নয়, একেবারে পিউর। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের রাজসিক প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় গোটা বাংলাদেশ।’
একইভাবে, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনের সঙ্গে দলের নেতৃত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। এখনো শতভাগ নেতা-কর্মী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।’
নেতাদের বর্তমান অবস্থান
আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা ভারতে আছেন। সভাপতিমণ্ডলীর ১৯ জন সদস্যের মধ্যে কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, বাকিরা আত্মগোপনে আছেন।
পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ
বর্তমানে দলীয় পুনর্গঠন বা নেতৃত্ব পরিবর্তনের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দলটির অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন এবং নেতৃত্বের পরিবর্তনের ওপর। যদি কোনো নতুন নেতৃত্ব আত্মপ্রকাশ করে এবং দল পুনর্গঠনের প্রয়াস চালায়, তবে সেটি কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
No comments