Header Ads

ইসরায়েলের পরিকল্পনা: সিরিয়াকে দুর্বল করার নতুন কৌশল

 

ইসরায়েলের পরিকল্পনা: সিরিয়াকে দুর্বল করার নতুন কৌশল



ইসরায়েল সিরিয়াকে একটি দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবে ধরে রাখার কৌশল অবলম্বন করছে এবং এই লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে তদবির চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটি এমন একটি নীতি গ্রহণ করেছে, যাতে সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত থাকে। এই পদক্ষেপকে মূলত তুরস্কের প্রভাব প্রতিহত করার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তুরস্ককে প্রতিহত করতে ইসরায়েলের উদ্যোগ

ইসরায়েলের অন্যতম উদ্বেগ হলো, তুরস্ক সিরিয়ায় ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সুরক্ষা দেবে, যা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধা ও অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনের ঘাঁটিতে পরিণত হতে পারে। মার্কিন গবেষণা সংস্থা সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের ফেলো অ্যারন লুন্ডের মতে, এই আশঙ্কা থেকেই ইসরায়েল সিরিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর, সেখানে ইসলামপন্থী শাসন প্রতিষ্ঠায় তুরস্কের সমর্থন ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করার কৌশল

সিরিয়াকে বিভক্ত ও দুর্বল রাখার জন্য ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। এ উদ্দেশ্যে, গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ইসরায়েল তার কৌশল তুলে ধরে এবং মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে। তারা সিরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এবং এ বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে একটি শ্বেতপত্রও হস্তান্তর করে।

সিরিয়ার স্থিতিশীলতার পথে বাধা

বর্তমানে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব দেশটিকে স্থিতিশীল করতে এবং প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইসরায়েল মনে করছে, নতুন সিরীয় সরকার ভবিষ্যতে ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

বাশার আল-আসাদের পতনের পর, ইসরায়েল সিরিয়ার সামরিক স্থাপনায় হামলা আরও বাড়িয়েছে। তারা সিরিয়ার সেনাঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে এবং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে থাকা একটি নিরপেক্ষ অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ইসরায়েল সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে হায়াত তাহরির আল শাম বা সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে মিত্র অন্য কোনো গোষ্ঠীর উপস্থিতি মেনে নেবে না।

রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটির প্রতি সমর্থন

তুরস্কের প্রভাব মোকাবিলায় ইসরায়েল সিরিয়ার তারতুস ও লাতাকিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় কিছু মার্কিন প্রতিনিধি ইসরায়েলের এই অবস্থানে বিস্ময় প্রকাশ করেন, কারণ তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো মিত্র। তবুও, ইসরায়েল যুক্তি দেয় যে সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি তাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক জটিলতা বৃদ্ধি

ইসরায়েল স্পষ্টভাবে চায়, সিরিয়া যেন একটি দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবে থেকে যায়। দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখতে চায় এবং একইসঙ্গে রাশিয়ার উপস্থিতিকে ব্যবহার করে তুরস্কের প্রভাব কমাতে চায়। তবে এই কৌশল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.