ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা, ধর্ষণ থামছে না

 

মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা দেশের সচেতন নাগরিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। নারী ও শিশুদের প্রতি চলমান সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনাগুলো আমাদের সামাজিক ও আইনি কাঠামোর দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলছে।

নারী ও শিশু নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ১২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। এটি আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০২৩ সালে মোট ১৭,৫৭১টি মামলা হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, আমাদের দেশে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করছে যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধীরা প্রায়ই শাস্তি এড়িয়ে যাচ্ছে। দিনাজপুরের পাঁচ বছরের এক শিশুকে নির্মমভাবে ধর্ষণ ও নির্যাতনের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাইফুল ইসলাম সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এটি শুধু ভুক্তভোগীদের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্যই এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। অপরাধীদের জামিনে মুক্ত হয়ে আসা বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

প্রতিরোধ ও প্রতিকার: আমাদের করণীয় ১. দ্রুত বিচার: ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। ২. কঠোর শাস্তি: ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই আসামিদের জামিনে মুক্তি দেওয়া যাবে না। 3. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে নারী ও শিশু সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ৪. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি: পুলিশ ও তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্যাতিতদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ ও কার্যকর তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। ৫. নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি: নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

আমাদের সমাজে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি রোধ করতে হলে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রতিটি নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, এবং এই দায়িত্ব পালনে আমরা সবাই সোচ্চার হবো।