Header Ads

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি: মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিন

 

 

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি: মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিন


আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিনটি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক, যা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে রচিত হয়েছে। ১৯৫২ সালের এই দিনে রফিক, সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বারসহ আরও অনেকে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেন। আজ এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের ৭৩ বছর পূর্ণ হলো।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি

একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মধ্যরাতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ শহীদ মিনারের পথে এগিয়ে আসেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, এরপর প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এর পরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার সংগ্রামে তরুণদের আত্মত্যাগ বিশ্বে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয় বাংলা বর্ণমালা। বাঙালির প্রাণের ভাষা রক্ষার জন্য এই আত্মদান শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০০০ সাল থেকে এটি বিশ্বের ১৮৮টি দেশে পালিত হয়ে আসছে। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য— 'জুলাই গণ অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ'

সারাদেশে একুশের আয়োজন

আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে এবং রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বর্ণমালাসংবলিত ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটসহ সারাদেশে শহীদদের স্মরণে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বিশেষ বাণী দিয়েছেন।

শহীদ মিনারে জনতার ঢল

সারারাত শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানুষের স্রোত অব্যাহত থাকে। হাতে ফুল, হৃদয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর কণ্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’—এই চিরস্মরণীয় গান গেয়ে হাজারো মানুষ একত্রিত হন। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অনেকে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনার আগমন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা নির্ধারিত সময়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, এটি বাঙালির চেতনার প্রতীক। এই দিনে শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে আমরা নতুন করে শপথ গ্রহণ করি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার।

No comments

Powered by Blogger.