সুন্দরবন দিবস: ২৩ বছরেও জাতীয় স্বীকৃতি মেলেনি
![]() |
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, যা প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। এটি অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের পাশাপাশি পালিত হচ্ছে ‘সুন্দরবন দিবস’। ২০০২ সাল থেকে সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় জেলাগুলোতে স্থানীয়ভাবে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে, তবে ২৩ বছরেও এটি জাতীয় স্বীকৃতি পায়নি।
জাতীয় স্বীকৃতির দাবি
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও খুলনায় বিভাগীয় পর্যায়ে সুন্দরবন দিবস পালন করা হচ্ছে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন পাঁচটি জেলার ১৭টি উপজেলায় যুব ফোরামের উদ্যোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে। আয়োজকরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে জাতীয়ভাবে এই দিবস পালনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের মতে, জাতীয় স্বীকৃতি পেলে সুন্দরবনের গুরুত্ব দেশ-বিদেশে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়বে এবং সংরক্ষণের কাজ সহজ হবে।
সুন্দরবনের গুরুত্ব ও সংরক্ষণ
সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় অবস্থিত। ১৮৭৮ সালে এটি সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মোট আয়তন ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে ৪,১৪৩ বর্গকিলোমিটার স্থলভাগ এবং ১,৮৭৩ বর্গকিলোমিটার জলভাগ। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপুল সংখ্যক প্রাণীর আশ্রয়স্থল।
এটি বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ইকোসিস্টেম, যেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ ৫০৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, ৩৫৫ প্রজাতির পাখি, ৮৭ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, এবং ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল হিসেবে কাজ করে এবং লাখো মানুষের জীবিকা নির্ভর করে এই বনটির ওপর।
পরিবেশগত হুমকি ও প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে এটি প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে, প্রকৃতির নিজস্ব ক্ষমতার কারণে সুন্দরবন ধীরে ধীরে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে।
সুন্দরবনের ইতিহাস ও নামকরণ
১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনের তিনটি অভয়ারণ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী গাছের নাম থেকেই এর নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে, কিছু গবেষকের মতে, ‘সমুন্দরবন’ শব্দটি থেকে ধীরে ধীরে এটি ‘সুন্দরবন’ হয়েছে। ১৭৬৯-১৭৭৩ সালে প্রথম সুন্দরবনের জরিপ পরিচালিত হয়।
জাতীয় স্বীকৃতির অভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি খুলনায় প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ‘সুন্দরবন ঘোষণা’ গৃহীত হয় এবং সরকারকে জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের আহ্বান জানানো হয়। ২০০২ সাল থেকে স্থানীয়ভাবে দিবসটি পালিত হলেও, সরকার এখনও এটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
বেসরকারি সংস্থা ‘রূপান্তর’-এর পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খোকন জানান, দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের অনুরোধ জানানো হলেও, এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো-ও মনে করেন যে, জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালন করা হলে এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গুরুত্ব পাবে এবং সুন্দরবন সংরক্ষণ সহজতর হবে।
এবারের সুন্দরবন দিবসে যুব ফোরামের প্রধান দাবি হলো—প্লাস্টিক, পলিথিন এবং কারেন্টজাল মুক্ত সুন্দরবন। সরকারের উচিত দ্রুত এই বিষয়গুলোতে পদক্ষেপ নেওয়া এবং জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
No comments