কলমের পর গাছ: বরগুনার আমিরুলের চমকপ্রদ আবিষ্কার
কলমের কালি ফুরিয়ে গেলে সাধারণত সেটি ফেলে দেওয়া হয়, যা পরে দূষণ সৃষ্টি করে। কিন্তু বরগুনার আমিরুল ইসলাম এমন একটি কলম তৈরি করেছে, যা ব্যবহারের পর মাটিতে পুঁতে দিলে গাছ জন্মাবে।
১৬ বছর বয়সী আমিরুলের ব্যতিক্রমী উদ্ভাবন
আমিরুল ইসলাম, আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী, পরিবেশবান্ধব একটি কাগজের কলম তৈরি করেছে। কলমটি ব্যবহারের পর মাটিতে পুঁতে দিলে এটি থেকে ফলদ গাছের চারা জন্ম নেবে। কলমটি দুই ধরনের – রঙিন কাগজে মোড়ানো কলমের দাম ১০ টাকা, আর সাদা কাগজের মোড়ানোটি ৫ টাকা।
কীভাবে জন্ম নিল আইডিয়াটি?
আমিরুল ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখত। প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা নিয়ে ভাবতে গিয়ে তার মাথায় নতুন ধরনের কলম তৈরির ধারণা আসে। দুই মাসের প্রচেষ্টায় সে শক্ত কাগজ দিয়ে কলমের কাঠামো তৈরি করে এবং তার মধ্যে ফলদ গাছের বীজ সংযোজন করে।
কলম তৈরির প্রক্রিয়া
প্রথমে বিভিন্ন রঙের কাগজের মধ্যে কালির শিষ বসানো হয়, এরপর বিশেষ আঠা দিয়ে কলমের কাঠামো শক্ত করা হয়। কলমের ভেতরে ফলদ গাছের বীজ রাখা হয়, যা ব্যবহারের পর মাটিতে পুঁতে দিলে চারা গজায়।
পরিবেশগত গুরুত্ব
বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের হার দিন দিন বাড়ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে দেশের নগরগুলোতে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কেজি, আর ঢাকায় এটি প্রায় ২৩ কেজি। এই বর্জ্যের একটি বড় অংশই পুনঃব্যবহার হয় না, বরং মাটিতে ও পানিতে মিশে পরিবেশ দূষণ করে।
আমিরুল জানায়, ‘মানুষ গাছ লাগাতে চায় না, কিন্তু কলম তো ফেলবেই। তাই এমন কলম তৈরি করেছি, যা ফেলার পর নিজেই গাছ হয়ে উঠবে।’ তার মতে, এই কলম শুধু পরিবেশ রক্ষা করবে না, বরং ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও তৈরি করবে।
জনপ্রিয়তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইতিমধ্যে আমিরুল দুই হাজারের বেশি কলম বিক্রি করেছে, এবং এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ হান্নান বলেন, ‘এটি শুধু পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির এক চমৎকার উপায়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, আমিরুলের প্রকল্পকে বড় পরিসরে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। সরকারি সহযোগিতা পেলে এই কলম সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব, যা একটি সবুজ বিপ্লব আনতে পারে।
No comments