দৌড়াও হাসিনা দৌড়াও’ গেম নিয়ে উত্তেজনা ও বিতর্ক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক গেম তৈরি করে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছেন তাসরিফ বিন মিজান। গুগল ক্রোমের বিখ্যাত ডাইনোসর গেমের আদলে বানানো এই গেমটিতে বাংলাদেশের এক পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দৌড়াচ্ছেন, আর তার প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছেন এক নোবেলজয়ী, হাতে কাঁটা নিয়ে আক্রমণের অপেক্ষায়!
গেমটি প্রকাশের পর মাত্র এক রাতেই এটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং ৩ লাখ ৪০ হাজারের বেশি বার খেলা হয়েছে। গেমটি তৈরি করেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী তাসরিফ। তিনি জানান, এটি মূলত মিমের ভিত্তিতে তৈরি করা হলেও, ব্যাপক ভাইরাল হবে তা তিনি আগেই অনুমান করেছিলেন।
গেমের কনসেপ্ট ও বৈশিষ্ট্য
গেমটিতে খেলোয়াড়দের কাজ হলো শেখ হাসিনার চরিত্রকে দৌড় করানো এবং কাঁটা হাতে থাকা প্রতিপক্ষের আক্রমণ এড়িয়ে যাওয়া। খেলাটি শুরু হতেই শেখ হাসিনার কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা বাজতে থাকে— ‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি, দেবার কিছু নেই; আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।’
গেমের পথে সংগ্রহ করতে হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেওয়া কয়েন। পেছনে উড়তে থাকে ভারতের জাতীয় পতাকা, শেখ হাসিনা প্রাণপণে ছুটে চলেন নরেন্দ্র মোদির দিকে, আর তার সামনে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকেন ইউনূস।
গেমের সবচেয়ে মজার অংশ হলো খেলোয়াড় হেরে গেলে শোনা যায় একটি পরিচিত সংলাপ— ‘কী অপরাধটা করেছি আমি?’ এই সংযোজনটি গেমটিকে আরও ব্যঙ্গাত্মক রূপ দিয়েছে এবং এটি ভাইরাল হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গেম নিয়ে প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
গেমটি একদিকে যেমন প্রচুর মজার খোরাক জুগিয়েছে, তেমনই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কেউ এটিকে নিছক ব্যঙ্গাত্মক বিনোদন হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করছেন এটি অসম্মানজনক। তাসরিফ জানান, গেম প্রকাশের পর থেকেই তিনি নানা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন— কেউ তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন, কেউবা গেমের ওয়েবসাইট হ্যাক করার কথা বলছেন।
তবে এসব নিয়ে তিনি খুব বেশি চিন্তিত নন। তার ভাষায়, ‘আমি জানতাম, এটি ভাইরাল হবেই। কিন্তু আমার মূল লক্ষ্য মেইনস্ট্রিম গেমিং মার্কেটে কাজ করা।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তাসরিফ জানিয়েছেন, তিনি আরও একটি নতুন গেম বানানোর পরিকল্পনা করছেন, যেখানে হয়তো খেলোয়াড়রা নতুন কোনো ভূমিকায় থাকবেন। তবে এটি নিছক শত্রুতার বার্তা নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ও হতাশার প্রতিফলন।
গেমটি ইতোমধ্যেই ২৬ ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ১৪৭ টাকা সমর্থন পেয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও বড় গেম তৈরিতে উৎসাহিত করতে পারে। তবে আপাতত তিনি মূলধারার গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার দিকেই মনোযোগ দিতে চান। তার লক্ষ্য স্টিম ও নিন্টেন্ডো সুইচের জন্য মানসম্পন্ন গেম তৈরি করা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তার ক্যারিয়ারের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া বা এনগেজমেন্ট পাওয়া আমার আসল লক্ষ্য নয়। আমি মূলধারার গেমিং বাজারে প্রবেশ করতে চাই।’
গেমটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আলোড়ন তুললেও, এটি যে নতুন ধরনের ডিজিটাল ব্যঙ্গাত্মক কনটেন্ট তৈরির পথ দেখিয়েছে, তা অস্বীকার করা যায় না।
No comments