আসিফ-জুলকারনাইনের ফেসবুক স্ট্যাটাস যুদ্ধ : অস্ত্রের ম্যাগাজিন
রবিবার (২৯ জুন) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার ব্যাগ থেকে গুলির ম্যাগাজিন উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় সারাদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলে।
এই ঘটনার পরদিন, সোমবার (৩০ জুন) আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে লিখেন,
“গতকালকের ঘটনায় এটা বুঝতে পারলাম, পিস্তল কেন, মিসাইল সঙ্গে রাখলেও আমি, আপনি কেউই নিরাপদ নই।”
এই স্ট্যাটাসের পরপরই সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পাল্টা স্ট্যাটাস দেন।
আসিফ তার পোস্টে আরও লেখেন,
“যেভাবে মুহূর্তের মধ্যেই দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ বিদেশে থাকা কারও হাতে পৌঁছে গেলো, তা রীতিমতো ভয়ংকর। যারা এই কাজ করছে, তারা চাইলে অর্থ বা স্বার্থের বিনিময়ে দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আমাদের রিয়েল-টাইম লোকেশন, শিডিউল ও সেনসিটিভ তথ্য পাচার করতে পারে।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“আমি সরকারের অংশ হয়েও যদি এমন ঘটনার শিকার হই, তাহলে সাধারণ নাগরিকদের অবস্থা কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এসব তথ্যে জড়িত সন্ত্রাসীদের বিচার কীভাবে হবে?”
তার অভিযোগ,
“যারা শত্রুপক্ষের ওপর নজরদারি করে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করার কথা, তারা এখন জনগণের ওপর নজর রাখছে, জনগণের অর্থ ব্যয় করছে চরিত্রহননের মতো কার্যক্রমে। যখন লেজিট কিছু পাচ্ছে না, তখন উদ্ভট ও হাস্যকর বিষয় তুলে ধরে আক্রমণ চালানো হচ্ছে।”
তিনি বলেন,
“গণ-অভ্যুত্থানের কিছু তথাকথিত অংশীজনের বক্তব্য এবং হাসিনাপুত্রের কথার মধ্যে এখন আর কোনো পার্থক্য নেই।”
“তবে আশার কথা হলো, দেশের জনগণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, এর পেছনে কারা জড়িত ছিল তা দেশের মানুষ বুঝে নিতে পারবে,” বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এই পোস্টের জবাবে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুকে লেখেন,
“সাধারণ নাগরিকদের জীবন সাধারণই থাকে। তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয় না। তারা প্রথমবার সুইজারল্যান্ড গিয়ে অন্যের টাকায় ফেন্ডির জ্যাকেট বা ডিজাইনার ঘড়ি কেনে না। তারা মন চাইলে দুবাইয়ে উড়াল দেয় না, কিংবা মানুষের টাকা দিয়ে দুবাইয়ের মলে শপিংও করে না।”
তিনি যোগ করেন,
“সাধারণ মানুষ কোনো প্রকল্পের কন্ট্রাক্ট ম্যানিপুলেট করে টাকা লোপাট করে না। নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর লোকদের হাতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার দায়িত্ব দিয়ে কমিশন খাওয়ার ব্যবস্থাও করে না।”
সরকার নিয়ে জুলকারনাইনের মন্তব্য ছিল,
“সরকার হতে হয় জনগণের ভোটে, কারো কাঁধে চড়ে নয়। আমরা সেই মানুষ, যারা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার কভার লোকেশনে গিয়ে তাদের টেকনিক্যাল ম্যানুয়াল সংগ্রহ করেছি, বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়া মন্ত্রীর বাড়িতে ব্যবসায়ী সেজে ঢুকে তথ্য বের করেছি, হাসিনা সরকারের পুলিশ বাহিনীর গোপন তথ্য ওয়াকিটকিতে ফাঁস করেছি, এমনকি সেনাপ্রধানকে রেকর্ড করেছি। আমরা অপরাধের কেন্দ্রে গিয়ে তথ্য নিয়ে আসি।”
তিনি আরও লিখেছেন,
“তুমি বরং আপাতত ‘ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি’ বলো। কারণ তুমি যেসব করেছ, সেগুলোর বেশিরভাগই সিসিটিভির আওতার বাইরে। সেসব একদিন প্রকাশ পাবে—তার জন্য স্ক্রিপ্ট প্রস্তুত রাখো।”
শেষে তিনি লেখেন,
“আমাকে যারা তথ্য দেয়, তারা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা বাটপার না যে ক্ষমতার গন্ধ পেয়ে নিজ বাবার নামে ঠিকাদারির লাইসেন্স নেয়। আর ধরা পড়লে বলে—‘আমি তো জানতামই না!’”
এই ঘটনার ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে বিষয়টি নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন হিসেবে দেখছেন।
No comments